চট্টগ্রামের থানায় মনীষীদের মুখ মলিন ময়লার ভাগাড়ের আড়ালে

‘কেউ কিছু পাওয়ার উপযুক্ত হলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তাকে বঞ্চিত করতে পারবে না’— স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী সকলের জানা। সচেতনতা তৈরি ছাড়াও সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে এসব বাণী সাঁটানো হয়। এমন লক্ষ্য সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানায় এমন সব মনীষীর ছবি সম্বলিত উক্তি সাঁটানো হয়েছে থানার সীমানা প্রাচীরে। কিন্তু অসচেতনতার কারণে এইসব মনীষীরা উল্টো অসম্মানিত হচ্ছেন সেখানে।

২০২০ সালে সৌন্দর্যবর্ধনের আওতায় চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার সীমানা প্রাচীর সাজানো হয় গৌরবের ইতিহাস ও সচেতনতার বার্তায়। তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ মহসীনের সময়ে করা এই সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমে ৫৯টি নান্দনিক চিত্রকর্ম ছাড়াও দেয়াল লিখন ও অসংখ্য ফুলগাছ দিয়ে থানার ভেতরে-বাইরে সাজানো হয়।

মাত্র কয়েক বছরের মাথায় সেই সৌন্দর্য যেন ম্লান হতে বসেছে। কোতোয়ালী থানায় গেলে দেখা যায়, মনীষীদের ছবিসম্বলিত উক্তির সামনেই ময়লার ভাগাড়। স্বামী বিবেকানন্দের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি পাশেই থাকা মহাত্মা গান্ধীর ছবিসম্বলিত লেখা ‘লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টাতেই গৌরব নিহিত, লক্ষ্যে পৌঁছানোতে নয়’ উক্তির সামনেও একই দশা। এমন কাজের মাধ্যমে জ্ঞানী মহান ব্যক্তিদের অসম্মান করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন নাগরিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কোতোয়ালী থানার গেইটে প্রবেশ করতেই মহাপুরুষদের ছবি সম্বলিত উক্তির সামনে প্রচুর পরিমাণে ময়লা পড়ে আছে। ওয়ানটাইম কাপ থেকে শুরু করে ঝাঁটা, চিপসের প্যাকেট, বাদামের খোঁসা, থানার অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কাগজের বাতিল প্যাকেট কোনটাই বাদ পড়েনি। সবই রয়েছে এ ময়লার ভাগাড়ে। যদিও টহল পুলিশের পিকআপের সারিতে ছবিগুলো সাধারণ মানুষের চোখের আড়ালেই থাকে।

এ বিষয়ে আনোয়ারার স্বামী বিবেকানন্দ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কালাচাঁন ভট্টাচার্য সীমান্ত বলেন, ‘সারা বিশ্বের যুব সমাজের আইকন স্বামী বিবেকানন্দর ছবি সম্বলিত উক্তির সামনেই এমন ময়লার ভাগাড় দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর ছবিতেও একই অবস্থা। আশা করি থানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে এ জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে, নয়তো এসব ছবি অপসারণ করবে।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দেয়ালে নানা সম্প্রদায়ের মহাপুরুষদের অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শেক্সপিয়ারের বাণী লেখা হয়। কারণ বড় মানুষের বাণীগুলো সাধারণ মানুষ অথবা বাচ্চাদের হৃদয় স্পর্শ করে। বড় মানুষ হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। বিষয়টি ইতিবাচক। যদি ইতিবাচক অবস্থান থেকে এগুলো নেতিবাচক পরিবেশে উৎকীর্ণ করা হয়, তাহলে এটি মানুষের অন্তরের ময়লার পরিচায়ক।’

তিনি বলেন, ‘এমন ঘটলে যে কোন মানুষ উদ্বুদ্ধ হওয়া দূরে থাকুক, ওই ময়লা আবর্জনার পাশ দিয়ে যেতে নাকে রুমাল ব্যবহার করবে। আর নাকে রুমাল দিয়ে বাণীগুলো কাউকে স্পর্শ করতে পারে না। এই বোধটা যাদের নাই তাদেরকে নির্বোধ বলা যায়। বরং এমন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মহাপুরুষদের, জ্ঞানী গুণী মহান ব্যক্তিদের তারা অসম্মান করে বলে আমার মনে হয়। কাউকে অপমান করা, অবজ্ঞা করার অধিকার কেউ কাউকে দেয়নি। বরং এগুলো করতে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের ছোট করে।’

বিষয়টি সম্পর্কে কোতোয়ালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) অতনু চক্রবর্তী বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখিনি। আমি দেখি। তারপর এ বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি।’

আরএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!