চট্টগ্রামের তরুণের লাইভে এসে বিব্রত বিশ্বসেরা দার্শনিক, স্পন্সর ছিল শাড়ির দোকান

চট্টগ্রামের এক তরুণের আহ্বানে ফেসবুক লাইভে এসে ব্রিবতকর অবস্থার শিকার হলেন আধুনিক ভাষাতত্ত্বের জনক ও শিক্ষাবিদ-দার্শনিক নোম চমস্কি। বিখ্যাত মার্কিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটির এই ইমেরিটাস প্রফেসর এক ঘন্টা ধরে ফেসবুক লাইভে এসে অপেক্ষা করলেও চট্টগ্রামের সেই তরুণ লাইভে এসেছেন একঘন্টা দেরিতে। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে বিখ্যাত দার্শনিক নোম চমস্কি ৫ মিনিট লাইভে থেকেই চলে গেছেন। ফেসবুক লাইভটি স্পন্সর করে ‘মোহর ফ্যাশন’ একটি শাড়ির দোকান। লাইভের স্ক্রলে চট্টগ্রামের সেই দোকানের নামও প্রচার করা হয়। এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে।

জানা গেছে, ‘টি-কাপ’ নামে একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চট্টগ্রামের বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী এক তরুণ তানভীরুল মিরাজ রিপন বিভিন্ন সময় মেইলে যোগাযোগ করার পর দার্শনিক নোম চমস্কিকে ফেসবুক লাইভে আসার জন্য রাজি করান। বুধবার (২৩ জুন) ম্যাসাচুসেটস সময় রাত ৮টায় ফেসবুক লাইভের জন্য সময় দেন চমস্কি। কিন্তু ডে লাইট সেভিংসের বিষয়টুকু না বুঝে তানভীরুল মিরাজ রিপন নামের ওই তরুণ এক ঘণ্টা দেরি করেন। অন্যদিকে যথাসময়ে চমস্কি বসে রয়েছেন। এভাবে বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে চমস্কি লাইভে বলেন— ‘am waiting, Are we scheduled for now?’

চমস্কির এমন প্রশ্ন না বুঝে তানভীরুল মিরাজ রিপন উল্টো তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লাইভ শেয়ার দিয়ে বলেন, ‘চমস্কি ইন্টারভিউ এর জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছেন!’ এরপর এক ঘণ্টা পরে লাইভে সংযুক্ত হয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করেন মিরাজ রিপন। এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় থাকা মার্কিন দার্শনিক চমস্কির হাতে তখন আর সময় ছিল না। কারণ অন্যত্র তার শিডিউল দেওয়া রয়েছে। শেষপর্যন্ত ৫ মিনিট পর বিব্রত চমস্কি ওই ফেসবুক লাইভ ছেড়ে যান।

এমন বিব্রতকর ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই বলেছেন, পুরো ঘটনাই বাংলাদেশের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক। চট্টগ্রামের ওই তরুণ নোম চমস্কির মতো বিশ্বখ্যাত একজন পণ্ডিতের মর্ম বোঝেনি। যদি বুঝতো তাহলে ফেসবুক লাইভে মোহর ফ্যাশনের স্পন্সর লাগাত না।

বিখ্যাত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম চট্টগ্রামের ওই তরুণকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আপনি লিখেছেন যে ‘নোম চমস্কির আকস্মিক কিছু কর্মসূচির’ কারণে আপনার অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। এটি মিথ্যা। আপনি নির্বোধের মতো ও ক্ষমার অযোগ্য ভুল করেছেন এবং তাঁর (চমস্কি) ওপর দোষ না চাপিয়ে আপনার তা স্বীকার করা উচিত। এটি খুবই অনৈতিক। তাঁকে অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে হচ্ছে জেনেও আপনি যেভাবে অনুষ্ঠান চালিয়েছেন তা অত্যন্ত অসম্মানজনক ও বিব্রতকর।’

ফেসবুক লাইভে তানভীরুল মিরাজ রিপন নামের ওই তরুণের শারীরিক ভঙ্গি ও ভাষা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নেটিজেনরা বলছেন রিপন মিরাজ চমস্কি চমস্কি বলে যাচ্ছিলেন। অথচ পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুযায়ী কারো নাম ধরে ডাকতে হলে তার পূর্বে, মিস, মিসেস বা মিস্টার যোগ করতে হয়।

হাসনাত এ কালাম নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৫ মিনিট যাবত আজাইরা কিছু প্রশ্ন করসে, খাতা দেখে দেখে। তাও ভুলভাল ইংরেজিতে, ভালোমতোন বাক্য গঠন না কইরাই। সবচে’ ভয়ংকর হচ্ছে- এই যে জোরপূর্বক ৫ মিনিটে যে কয়েকটা প্রশ্ন করসে- ওই সময় অনুষ্ঠানের স্ক্রলে লিখে রাখসে- Sponsor by Mohur Fashion House. এই ফ্যাশন হাউজ আবার ওই আয়োজক উপস্থাপকের দোস্তের অনলাইন শপ।’

নেটপাড়ায় এমন সমালোচনার মুখে ওই তরুণ শেষপর্যন্ত ক্ষমা চেয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘নোম চমস্কি বিখ্যাত একজন স্কলার৷ আজকের শো’তে আমার যথেষ্ট ভুল ছিলো, আমি টাইম ম্যানেজমেন্ট বুঝিনি এবং সময় নিয়ে সচেতন ছিলাম না। পাশাপাশি আমি যে হোমওয়ার্ক করেছি সেখানেও হয়তো ভুল ছিলো৷ যা আপনারা মেনে নিতে পারেননি ৷ এটির জন্য আমি নিঃশর্তে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আপনাদের কাছে৷ আমি নতুন, আগ্রহী শিখতে, আমি শিখছি, আরো শিখাবেন আমাকে। নতুন হিসেবে আমাকে ক্ষমা করবেন।’

তানভীরুল মিরাজ রিপন বলেন, ‘প্রফেসর নোম চমস্কির সাথে কথা হয়েছে তিনি আবারো আমার সাক্ষাৎকারে আসবেন। তাঁকেও আমি দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমি শো’র খুব প্রস্তুতি নিবো। এবং আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন আগামী শো’র জন্য। প্রশ্ন তৈরি করতেও সহযোগিতা করবেন আশা করছি। আমার ভুলগুলোর জন্য দুঃখিত বাংলাদেশের দর্শকের কাছে। আমাকে আপনারা শিখাবেন সে প্রত্যাশা।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!