চট্টগ্রামের টর্চারসেলে যৌন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ, ৪ বছর পর নাটকীয় কায়দায় উদ্ধার

উদ্ধার হল তিন নারীনেত্রীর হস্তক্ষেপে

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্বামীর শত কোটি টাকার সম্পদ হাতাতে চার বছর ধরে টর্চারসেলে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছিলেন জেসমিন আকতার জেরিন নামের এক গৃহবধূ।

চট্টগ্রাম নগরীর পশ্চিম বাকলিয়ার শ্বশুরবাড়িতে তার ননদ রীনা বেগমের স্বামী মো. হাবিবের কাছে এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে কিল-ঘুষিসহ বাড়তো নির্যাতনের মাত্রা। হাবিবের আঘাতে লজ্জা স্থান থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়ে অচেতন হন জেরিন।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামীর উপস্থিতিতেই চলতো এমন পাশবিক নির্যাতন। নির্যাতনের বিষয়ে কাউকে অবহিত করলে হুমকি দেওয়া হতো বিদেশে পাচারের। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামীর নামে থাকা শতকোটি টাকার সম্পদ ভোগ করতে এমন নির্যাতন করা হয়— অভিযোগ জেরিনের।

বিভৎস নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এফ রহমান হলে সংবাদ সম্মেলন করেন জেরিন নামের ওই গৃহবধূ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই পাশবিক নির্যা্তনের শিকার হয়ে আসছি। বিয়ের পর আমার স্বামীর উপস্থিতিতে কয়েকশবার হাবিবের কাছে যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছি। ১৭ জুন হাবিব যৌনলালসা চরিতার্থের উদ্দেশে আমাকে চুল ধরে বিছানায় ফেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ করার চেষ্টা করে। আমি অসম্মতি জানিয়ে চিৎকার করলে কাজের মেয়ে রোমা আকতারসহ কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে হাবিব আমার লজ্জাস্থানে সজোরে আঘাত করে। আমার লজ্জাস্থান দিয়ে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে থাকে এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’

জেরিন বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে বাসায় বেলকনির গ্রিল স্থায়ীভাবে ওয়েলডিং করে দেন। হাবিব আমার শয়ন কক্ষে ঢুকবার জন্য বেলকনির ছাদ ভেঙ্গে নিচ থেকে ওঠার ও ছাদ দিয়ে পালানোর জন্য লোহার ২টি সিড়ি তৈরি করেন। যা ঢাকনা দিয়ে তৈরি করে। গভীর রাতে যখন তখন আমার শয়নকক্ষে শয্যাশায়ী থাকা অবস্থায় হাবিব ওই সিঁড়ি দিয়ে প্রবেশ করে আমাকে যৌন নির্যাতন করতো। নির্যাতনের কথা যেন কাউকে বলতে না পারি সেজন্য আমাকে মোবাইল ব্যবহার করতে দেয়নি তারা। ঘর থেকে বের হতে দেয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বৃদ্ধ মা আমার সাথে দেখা করতে আসলেও রীনা ও হাবিবের বাধার মুখে দেখা করতে পারেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ আগস্ট কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর শাহিন আকতার রোজী ও হুরে আরা বিউটির সহযোগিতায় আমাকে উদ্ধার করতে যান। ৬ ঘন্টার মত বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে দুই শিশু সন্তানসহ আমাকে উদ্ধার করেন তারা। আমি মামলা করেছি। আমি সুবিচার চাই।’

জানা গেছে, কক্সবাজারের মেয়ে জেরিনের সাথে ২০১৭ সালের জুনে বিয়ে হয় চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ার বাসিন্দা হাসান মুরাদের সাথে। তাদের ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে। মুরাদ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। বাবা মায়ের এক সন্তান তিনি। তার নামে প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মুরাদের পালক বোন রীনা ও তার স্বামী হাবিব সম্পদের লোভে এমন নির্যাতন করে আসছে বলে অভিযোগ জেরিনের।

আরএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!