চট্টগ্রামের ‘জ্বিনের বাদশা’র খপ্পরে পড়ে সৌদি প্রবাসী খোয়ালেন ৩০ লাখ টাকা

সৌদি ‘কপিল’কে বাগে আনার গ্যারান্টি

পৃথিবীর জটিল সব সমস্যার সমাধান দেন ‘জ্বিনের বাদশা’ আবদুল মান্নান। হারানো টাকা ফিরে পাওয়া, দূরের মানুষকে কাছে পাওয়া, বিদেশ যেতে বাধা থেকে হাজার রকমের সমস্যার সমাধান দেন তিনি। সহজ-সরল মানুষকে ফাঁদে ফেলে এভাবেই চলে যাচ্ছিল মান্নানের প্রতারণা।

এমনই এক ঘটনায় হারানো টাকা ফিরে পেতে এই ‘জ্বিনের বাদশা’ আবদুল মান্নানের দ্বারস্থ হয়ে উল্টো আরও ৩০ লাখ টাকা খোয়ালেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা এক সৌদি প্রবাসী আবুল হাসান সহিদ।

‘জ্বিনের বাদশা’র প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই সৌদি প্রবাসী থানায় মামলা করার পর চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ‘জ্বিনের বাদশা’ আবদুল মান্নান (৫৮) ছাড়াও তার দুই সহযোগী জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩) ও আবু তৈয়বকে (৫৮) গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সৌদি প্রবাসী আবুল হাসান সহিদ দীর্ঘ ১৮ বছর পর চট্টগ্রামে আসার পর জানতে পারেন সৌদি আরবে থাকা তার সমস্ত সম্পদ তার ‘কপিল’ সৌদি নাগরিক আদনান সাঈদ আল সাদী আত্মসাৎ করেছেন।

এমন খবরে দিশেহারা আবুল হাসান সহিদের সঙ্গে ‘জ্বিনের বাদশা’র যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন নগরীর হাজারী গলির এক সোনার দোকানের কর্মচারী জোবায়ের হোসেন রিজভী। সহিদের মানসিক অবস্থা জেনে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন ‘জ্বিনের বাদশা’ আবদুল মান্নান। চট্টগ্রামে বসেই সৌদি আরবে আত্মসাৎ হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আশ্বাস দেন তিনি। আশ্বাসই শুধু নয়, ‘জ্বিনের বাদশা’ এই গ্যারান্টিও দেন যে সৌদি আরবের কপিল বাংলাদেশে এসেই সব কিছু ফিরিয়ে দিয়ে যাবেন।

এরপর ‘জ্বিনের বাদশা’র সঙ্গে নগদ দুই লাখ টাকা, তিন ভরি স্বর্ণ ও এক হাজার মার্কিন ডলারের বিনিময়ে মৌখিক চুক্তিও হয় সহিদের।

এই চুক্তি অনুসারে ‘জ্বিনের বাদশা’ মান্নানকে দুই লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন অজুহাতে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হয় মোট ২৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

কিন্তু এর দীর্ঘদিন পরও কাজ না হওয়ায় সহিদ যোগাযোগ করেন ‘জ্বিনের বাদশা’ মান্নান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে। এ সময় তারা বারবার শুধু ধৈর্য ধরে বলেন। এই সঙ্গে এও জানিয়ে দেন, চুক্তির কথা বাইরের কারও কাছে প্রকাশ করলে সহিদের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হবে এবং মান্নানের পালিত জ্বিন তাকে গলা টিপে খুন করবে। এছাড়া সহিদের ছেলেমেয়েদেরও ক্ষতি হতে পারে।

একপর্যায়ে সহিদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ‘জ্বিনের বাদশা’ মান্নান ও তার সহযোগীরা।

প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে গত আগস্টে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ‘জ্বিনের বাদশা’ আবদুল মান্নান ও তার সহযোগী জোবায়ের হোসেন রিজভির বিরুদ্ধে মামলা করেন সৌদি প্রবাসী সহিদ। এরপর বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আবদুল মান্নান (৫৮) ছাড়াও তার দুই সহযোগী জোবাইর হোসাইন রিজভী (২৩) ও আবু তৈয়বকে (৫৮) গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জিনের বাদশা সেজে প্রতারণা করা একটি চক্রের তিনজনকে আটক করেছি। এই চক্রে আরও কে কে জড়িত তা আমরা বের করার চেষ্টা করছি।’

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে জানান ওসি নেজাম।

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!