চট্টগ্রামের জামায়াত নেতা শামসুল ইসলাম ঢাকায় গ্রেপ্তার

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সদ্য সাবেক আমির মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।

রাজধানী ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শামসুল ইসলামকে আটক করেছে বলে জামায়াতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এই দলটির আমির।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে দেওয়া হয়নি।

জামায়েতের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং আইআইইউসি’র সদ্য সাবেক বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের চকবাজার, কোতোয়ালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, সীতাকুণ্ডসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। এসবের মধ্যে ১০টির বেশি মামলা বিস্ফোরক আইন ও ৮টির বেশি বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হয়েছে।

জামায়াতের অন্যতম নীতিনির্ধারক শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে অন্তত ৪০টি নাশকতাসহ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) অর্থ আত্মসাৎ, গাড়ি চুরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। জামায়াত ইসলামীর অর্থ যোগানদাতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মীর কাশেম আলীর বেয়াই শামসুল ইসলাম বর্তমানে জামায়াতের সেকেন্ড ইন কমান্ড। বেয়াই মীর কাশেম আলীর ব্যবসার অধিকাংশও এখন তার নিয়ন্ত্রণে। তিনি এখন জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা।

তার বিরুদ্ধে আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা দায়ের করে। এছাড়া আইআইইউসি ট্রান্সপোর্ট ডিভিশন আনম শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে টয়োটা প্রিমিও জি-সুপারিওর ব্র্যান্ডের গাড়ি আত্মসাতের মামলা দায়ের করে আদালতে।

এর আগে গত মার্চে আইআইইউসির নতুন ট্রাস্টি বোর্ড অনুমোদন করে সরকার। প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীকে চেয়ারম্যান করে ১৯ সদস্যের এই ট্রাস্টি বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জামায়াত নেতাদের দীর্ঘদিনের আর্থিক ও একাডেমিক এই সিন্ডিকেট ভেঙে যায়। প্রাথমিক তদন্তেই শামসুল ইসলামের অনুসারী জামায়াত নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে অবিশ্বাস্য সব দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।

অভিযোগে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শামসুল ইসলাম প্রায় ১০ বছর ধরে গড়ে তোলেন একক সাম্রাজ্য। তার অনুগত শিবির ক্যাডারদের দিয়েই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। শিবির ক্যাডারদের পুনর্বাসন করার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে আইআইইউসি ক্যাম্পাস। এমনকি চাকরি না করেই শিবির নেতাদের হাতে শামসুল ইসলামের ইশারায় এই প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে দেওয়া হতো লাখ টাকা বেতন।

জানা গেছে, শামসুল ইসলামের অনুগত শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আ জ ম ওবায়দুল্লাহ এই প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু চাকরি না করেই তিনি তুলে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা বেতন। এ কারণে তাকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাওলানা শামসুল ইসলামের পিএস শফিউল আলমও চাকরি না করে বেতন তুলে নিতেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে।

একাউন্টস এন্ড ফাইন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট ডাইরেক্টর জয়নুল আবেদিন স্বাক্ষরিত এক নথিতে দেখা গেছে, সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলামের জন্য গাড়ি কেনার কথা উল্লেখ করে তার পিএস শফিউল আলম দুই দফায় মোট ৩০ লাখ টাকা তুলে নেন। এই টাকার অ্যাডজাস্টমেন্ট বিল দিলেও যথাযথ পর্ষদের অনুমোদন সংক্রান্ত কোনো নথি জমা দেননি।

আইআইইউসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক তৌফিকুর রহমান ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৫ টাকা নিজের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে তুলে নেন। গত ৬ মার্চ নতুন ট্রাস্টি বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি আর অফিসে আসেননি। পরে তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই টাকার হিসাব না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৩ মে চট্টগ্রাম চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক তৌফিকুর রহমান জামায়াত নেতা শামসুল ইসলামের আস্থাভাজন। তিনি নিয়মিত জামায়াতের নেতাদের হাতে আইআইইউসির ফান্ড থেকে লাখ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে তুলে দিতেন।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির চট্টমেট্রো-গ-১৩-৩৪১৮ প্রিমিও জি সিরিজের একটি নতুন গাড়ি এখনও জামায়াতের নায়েবে আমীর শামসুল ইসলাম পরিবহন পুলে ফেরত দেননি।

অভিযোগ রয়েছে, মাওলানা শামসুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আমীরুজ্জামান, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেককে আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাদের বিভিন্ন পদে নিযুক্ত করে এই উল্লেখযোগ্য অংকের ভাতাও দেওয়া হতো এই প্রতিষ্ঠান থেকে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!