চট্টগ্রামের ছেলে ৩৮তম বিসিএসে সেরাদের সেরা

কাজ করছেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের নবীন কর্মকর্তা হিসেবে। তার আগেই ২০১৭ সালে দিয়েছিলেন বিসিএস পরীক্ষা— সেটাই প্রথম ও একমাত্র। তাতেই একেবারে সাফল্যের চূড়ায় উঠে গেলেন। সারাদেশে শিক্ষা ক্যাডারে মেধাতালিকায় প্রথম স্থানে যার নামটি জ্বলজ্বল করছে, তিনি চট্টগ্রামেরই ছেলে। ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে হয়েছেন সেরাদের সেরা।

সারাদেশে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম হওয়া গাজী মুহাম্মদ ইমরোজ হোসেন নিজেও ভাবতে পারেননি এমন অভাবনীয় ফল তিনি পাবেন। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে অনুভূতি জানিয়ে ইমরোজ বললেন, ‘বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শোকরিয়া ৩৮তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। সত্যিই এটা অন্যরকম অনুভূতি। তিন-চার বছর টানা পরিশ্রমের পর এমন ফলাফল পেয়ে খুব ভাল লাগছে।’

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের এয়াকুবদন্ডী এলাকার গাজী পাড়ার সন্তান গাজী মুহাম্মদ ইমরোজ হোসেন। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সিলেট শাখায় প্রভিশনাল অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে পা দেন ২০১৯ সালে। এর দুই বছর আগে দেওয়া বিসিএস পরীক্ষার ফল বের হল মঙ্গলবার (৩০ জুন)। ৩৮তম এই বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

বিসিএসে এই সাফল্যের পেছনে পরিবার থেকেই সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন ইমরোজ। তার প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস তার বাবা-মা। বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা গাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস। মা নুর আয়েশা বেগম। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় তিনি। ছোট দুই বোন বিবাহিত, ছোট ভাই কোরআনে হাফেজ ।

গাজী মুহাম্মদ ইমরোজ হোসেন পটিয়ার শাহচাঁন্দ আউলিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৯ সালে গোল্ডেন-এ প্লাস পেয়ে দাখিল এবং একই মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে মানবিক বিভাগে এ প্লাস পেয়ে আলিম পাশ করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

ইমরোজ বলেন, ‘আমি পড়ালেখার ক্ষেত্রে কোন ধরনের কম্প্রোমাইজ করতাম না। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করতাম।’

পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্বটা একটু বেশিই ছিল ইমরোজের। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ভীষণ মনোযোগী ইমরোজের লক্ষ্য ছিল ইসলামিক স্কলার হয়ে দ্বীনের সেবা করা। পড়ালেখায় বাবা-মা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন সবসময়। ইমরোজ বিসিএসের পড়াশোনা করেছেন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে রাত জেগে পড়াশোনা করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বিসিএসের জন্য যা কিছু করেছি, সবকিছুই নিজে নিজে। মানুষের নেতিবাচক কথাগুলো আমি সবসময়ই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। তবে আমার বাবা-মা অনেক সহযোগিতা করেছেন।’

ইমরোজ বলেন, ‘৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। বাবা-মা চেয়েছিলেন আমি যেন প্রশাসন ক্যাডারে যাই। কিন্তু আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিল শিক্ষা ক্যাডার।’

তিনি বলেন, ‘যদিও বাবা-মায়ের কথা রাখতে গিয়ে ফরমে প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার দিয়ে দ্বিতীয় পছন্দ দিয়েছিলাম শিক্ষা ক্যাডার। আমি মনে করি, প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারের চাকুরেরা তাদের কাজের বাইরে কিছুই করতে পারেন না। কিন্তু একজন আদর্শ শিক্ষক তার মনের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজে লাগাতে পারেন এবং অনেক মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারেন। মানুষ গড়ার কারিগরের এমন পেশায় যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’

ইমরোজের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ গাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘পড়ালেখার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল সবসময়। আমি নিজে দেখেছি সারা রাত জেগে থেকে পড়াশোনা করেছে। অবশেষে কষ্টের ফল পেয়েছে সে।’

তার গৃহিণী মা নুর আয়েশা বেগম বলেন,‘ ভালোভাবে পড়াশোনা করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও বিসিএস ক্যাডার হতে পারে। প্রতিবারই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিসিএসে উত্তীর্ণ হচ্ছে। আমার ছেলে ছাত্র হিসেবে খুবই মেধাবী। ইসলামী শিক্ষায়ও সমানভাবে পারদর্শী। তার এই সাফল্যে আমি মা হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!