চট্টগ্রামের ছেলের সঙ্গে রাজশাহীর মেয়ের প্রেম আত্মহননে শেষ

রাতে ফোনে বাকবিতণ্ডা, ভোরে মিলল ঝুলন্ত লাশ

চট্টগ্রামের এক তরুণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর। তিন থেকে চার বছরের সেই সম্পর্কে জায়গা করে নেয় অবিশ্বাসের বিষ। চলতে থাকে অশান্তি-অসন্তোষ। শনিবার রাতে সহপাঠীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেসে মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখেছেন মেয়েটিকে। আর ভোরে সেখানেই পাওয়া গেল তার ঝুলন্ত লাশ। ধারণা করা হচ্ছে, আত্মহত্যাই করেছেন তিনি।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ৩টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন মির্জাপুর এলাকার একটি মেস থেকে আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী মোবাসসিরা তাহসিন ইরার মৃতদেহ উদ্ধার করে মতিহার থানা পুলিশ।

ইরার বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায়। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও মা একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন বোনের মধ্যে ইরা দ্বিতীয়।

তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শিউলি খানম জানান, সুরতহাল রিপোর্টে ইরা আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ইরা আত্মহত্যা করেছেন। তার ঝুলন্ত লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে আসল রহস্য জানা যাবে।’

শিউলি খানম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তিনি গতরাতেও মেসে কারো সঙ্গে মোবাইল ফোনে উচ্চস্বরে কথা বলেছেন— এমন তথ্য জেনেছি। তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কার সঙ্গে কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছে এবং মোবাইলের কল রেকর্ড সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব থেকে আরও তথ্য জানা যাবে।’

এদিকে ইরার পরিবারও বলছে, তিনি প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তার ভগ্নিপতি ইজাজ আহমেদ বলেন, ‘শনিবার রাত দেড়টার দিকে ইরার এক বান্ধবী ফোন করে জানায় সে আত্মহত্যা করেছে। ইরার সঙ্গে সাব্বির নামের এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি থাকেন চট্টগ্রামে। তাদের প্রেমের সম্পর্কে ঝামেলা চলছিল, কিন্তু আত্মহত্যা করবে এমনটা আমরা কখনো ভাবিনি।’

ইজাজ আহমেদ আরো বলেন, ‘ইরার সঙ্গে চট্টগ্রামের ওই ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ৩-৪ বছরের। সে ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজে পড়তো। ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবাদে হয়তো ওই ছেলের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়।’

ইরার মেসে থাকা এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তাদের সম্পর্কে প্রায়ই ঝামেলা হতো। মাঝে মাঝেই তারা ঝগড়া করতেন। ইরা এ নিয়ে হতাশায় থাকতেন, মন খারাপ করে থাকতেন।’

মৃত্যুর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ছাত্রী একটি স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘একমাত্র ‘চিনু আপা’ ইজ রিয়েল। কারণ একমাত্র উনিই উনার ছোঁয়া দিয়ে মানুষের ডিপ্রেশন কাটান। কাইন্ডলি কেউ উনাকে ইগ্নোর করবেন না এবং একটি করে লাভ দিয়ে যাবেন।’ তার ফেসবুক আইডির বায়োতে ‘আই এম ফাইন, জাস্ট টায়ার্ড’ লেখা দেখা যায়।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সাব্বিরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে ইরার পরিবার।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!