চট্টগ্রামের ছাত্রলীগে মহিউদ্দিন গ্রুপই বিবাদে জড়াল প্রকাশ্যে, ‘প্যাকেজ কমিটি’র জবাবে পাল্টা কমিটি

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দুটি ওয়ার্ডে আচমকা ‘প্যাকেজ কমিটি’ ঘোষণার পর এবার পাল্টা ‘কমিটি’ দিলেন নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতাদের একাংশ। পাল্টাপাল্টিতে যুক্ত থাকা দুই পক্ষই মহিউদ্দিন চৌধুরী বলয়ের। আর এর মাধ্যমে একই বলয়ের দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যকার অন্তর্দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। এদিকে এরই মধ্যে পাল্টা কমিটি দেওয়া নেতাদের শাস্তি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

জানা গেছে, বছরের শেষ দিন ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানা ও উত্তর হালিশহর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করে নগর ছাত্রলীগ। কমিটি ঘোষণার পরপরই নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসেন ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর স্বাক্ষরিত কমিটিকে ‘প্যাকেজ’ কমিটি বলে অভিহিত করে সেদিনই রাস্তা অবরোধ করা ছাড়াও বিক্ষোভ মিছিল করে ২৬ নং ওয়ার্ডের পদবঞ্চিত নেতারা। এর মাত্র দুদিন পর রোববার (২ জানুয়ারি) এবার সেই ২৬ নম্বর ওয়ার্ডেই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১১ নেতা মিলে।

২৬ নম্বর ওয়ার্ডেই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১১ নেতা মিলে
২৬ নম্বর ওয়ার্ডেই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ১১ নেতা মিলে

রোববার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের প্যাডে ইমরান খান আরজীকে সভাপতি ও হামিদুল হাসান সিফাতকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী এক বছরের জন্য ২৫ সদস্যবিশিষ্ট এই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এই কমিটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল, ফখরুল আহমদ পাবেল, মঈনুল হোসেন শিমুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী বাবু, গোলাম সামদানী জনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক কবির আহমেদ, ছাত্র বৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক মিন্টু কুমার দে, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আবুল মনসুর টিটু, উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তুষার ধর, উপনাট্য বিষয়ক সম্পাদক মনির আলমসহ মোট ১১ নেতা।

নিজেদের কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন এই পাল্টা কমিটি— এমন প্রশ্নের উত্তরে নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সামদানী জনি বলেন, ‘ইমু-দস্তগীর নিজেদের ইচ্ছেমত কমিটি দিচ্ছে। কারও সাথে কোনো কথা না বলে, যারা প্রকৃত ছাত্রলীগ করে তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ওদের বেডরুমে যারা হাজিরা দেয় তাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। মহিউদ্দীন বলয়ের শীর্ষ নেতারা একাধিকবার তাদেরকে সবার সাথে সমন্বয় করার নির্দেশ দিলেও তারা তা গ্রাহ্য করছে না। ’

এই পাল্টা কমিটির গ্রহণযোগ্যতা বা বৈধতা কতটুকু— এমন প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, ‘আমি জানি সাংগঠনিকভাবে এটা অবৈধ। কিন্তু আমরা এই কমিটিটা তাদের স্বৈরতান্ত্রিক কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ঘোষণা করেছি।’

এদিকে পাল্টা কমিটির ব্যাপারে এখনও ‘কিছু জানেন না’ বলে জানিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও এই বিষয়ে কিছু শুনিনি বা দেখিনি। যদি প্রমাণ পাই তবে সেই ১১ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগেও পাল্টা কমিটি দেওয়ার জন্য নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।’

প্রসঙ্গত, এর আগে মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের পাল্টা কমিটি দিয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিথুন মল্লিক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল। এবার এই ১১ নেতার বিষয়ে একই শাস্তির ইঙ্গিত করেছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দস্তগীর।

এদিকে দস্তগীরের বহিষ্কারের হুঙ্কার নিয়ে জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফখরুল আহমদ পাবেল বলেন, ‘যদি ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মীদের সাংগঠনিক পরিচয় দিতে গিয়ে বহিষ্কৃত হই, তবে তা মাথা পেতে নেবো। তারপরও ওদের মত কর্মীদের ঘামের সাথে-রক্তের সাথে বেঈমানি করতে পারবো না।’

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর আকবর হোসেন রাজনকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে আগামি তিন মাসের জন্য ৭৮ সদস্যবিশিষ্ট সদরঘাট থানা আহ্বায়ক কমিটি এবং ফরহাদ উদ্দিন জিতুকে সভাপতি ও ফয়সাল বাদশাকে সাধারণ সম্পাদক করে আগামী এক বছরের জন্য ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট ২৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে নগর ছাত্রলীগ।

তবে এই কমিটি ঘোষণার পরপরই ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটিকে হাস্যকর ও ‘প্যাকেজ কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও রাস্তা অবরোধ করেন পদবঞ্চিত নেতারা। পদবঞ্চিত একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, ‘প্রকৃত ছাত্রদের বাদ দিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও ইমু-দস্তগীরকে হাজিরা দেওয়া বখাটেদের নেতা বানানো হয়েছে— যা ২৬ নং ওয়ার্ডের ছাত্রসমাজ কখনও মানবে না।’ নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা ফরহাদ উদ্দিন জিতুকে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিক্ষোভকারী নেতাকর্মীরা।

এর আগে নগর ছাত্রলীগ ঘোষিত হালিশহর থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে তৃতীয় শ্রেণি পাশ, এমনকি ফার্নিচার মিস্ত্রিকেও থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগে মহিউদ্দিন-নাছির গ্রুপের দ্বন্দ্ব চিরাচরিত হলেও এবার এই প্রথম মহিউদ্দিন বলয়ের ভেতরেও অন্তর্দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠল।

বাকি নেতাদের সুরে সুর মিলিয়ে নগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি একরামুল হক রাসেল বলেন, ‘ইমু-দস্তগীরের রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতাকে কেউ প্রতিরোধ করেনি বলে তারা প্রতিটি এলাকায় একচেটিয়া কমিটি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা শুরুটা করলাম এবং এই বিদ্রোহ চলতেই থাকবে ততদিন— যতদিন না পর্যন্ত ইমু-দস্তগীর সুস্থ চিন্তাভাবনায় ফিরে না আসছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!