চট্টগ্রামের চোরের দল ঢাকা মাতিয়ে ধরা পুলিশের জালে, আছে নারীও

বউয়ের সাজানো কৌশলে চুরি করতেন স্বামী

এই চোরের দলে নারী-পুরুষ সবাই আছেন। একসময় তারা শুধু চট্টগ্রামেই চুরির কাজে নিয়োজিত ছিলেন। চুরিতে হাতেখড়ি থেকে হাত পাকানো— সবই হয়েছে চট্টগ্রামে। তিন-চার বছর ধরে চট্টগ্রামে চুরিচামারির পর দেশে যখন করোনার হানা পড়ল, তখন চোরের এই দলটি পাকাপাকিভাবে চলে যায় ঢাকায়। সেখানেই গত প্রায় দেড় বছর ধরে অভিনব কৌশলে চুরি করে যাচ্ছিল তারা।

রাজধানীর বহুতল ভবনের বাসা, অফিস কিংবা মার্কেটেই চুরির টার্গেট ছিল তাদের। প্রথমে দলের নারী সদস্যদের পাঠিয়ে টার্গেট করা ভবনে সবকিছু রেকি করা হতো। এরপর রাতে বা সুবিধামত সময়ে সেসব ভবনে চুরি করা হতো। তবে কোনো মালপত্র নয়, নিরাপত্তা ও দ্রুত সটকে পড়ার স্বার্থে শুধু নগদ টাকাই চুরি করতো চক্রটি।

সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা প্যারাডাইস টাওয়ারে চুরির ঘটনায় সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এই সাতজন হলেন— জামাল উদ্দিন, শফিক ভূঁইয়া ওরফে বাছা, জসিম উদ্দীন, কাদের ওরফে কিবরিয়া ওরফে বাবু, মো. শাকিল, আলামিন ও শফিকের স্ত্রী চক্রের রেকির কাজে নিয়োজিত মুক্তা আক্তার। রাজধানীর ডেমরা ও কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে চুরির কাজে ব্যবহৃত হাতুড়ি, লোহার রেঞ্জ, হ্যাক্সো ব্লেড, প্লায়ার্স, স্ক্রু ড্রাইভার ও ২০টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই চট্টগ্রাম বন্দর থানা এলাকাকেন্দ্রিক বিভিন্ন চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত। গত কয়েক বছরে তারা ঢাকায় এসে সুউচ্চ ভবন, অফিস ও টাওয়ারে চুরি শুরু করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে জামালের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ১০টি ও ঢাকায় ৪টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া চক্রের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জেনেছে, গ্রেপ্তার হওয়া চোরের দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সুউচ্চ টাওয়ারে অবস্থিত বিভিন্ন নামিদামি অফিসে প্রথমে চুরির টার্গেট করেন। চোরচক্রের সদস্যরা প্রথমে খোলা থাকা অবস্থায় অফিস ও ভবন ২-৩ দিন ধরে রেকি করে চুরির কৌশল রপ্ত করে। এরপর সুযোগ বুঝে টার্গেট করা বন্ধ হয়ে যাওয়া অফিসের তালা, সিকিউরিটি লক, ডিজিটাল লক ও অফিসকক্ষের ড্রয়ার ভেঙে চুরি করে সুকৌশলে বের হয়ে যায়। শুধু ঢাকাতেই তাদের বিরুদ্ধে সাতটি চুরির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন এলাকার করপোরেট অফিসে চুরি করার টার্গেট করে চক্রের নারী সদস্য মুক্তা দু-তিন দিন ওই অফিস ও আশপাশের এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করতেন। সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন, কোন দিক দিয়ে ওই অফিসে ঢুকতে হবে, চুরির পর কীভাবে সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে হবে—এসব তথ্য তিনি স্বামী শফিককে জানাতেন। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ওই অফিসে চুরি করতেন এ চক্রের সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া চোরের দল চট্টগ্রাম বন্দরে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল আগে। হাতেখড়িও সেখানেই। সেখানে তারা তিন-চার বছর ধরে চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। পরে চট্টগ্রাম থেকে করোনা পরিস্থিতিতে তারা ঢাকায় চলে যায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!