চট্টগ্রামের এতিমখানায় ‘ধোকাবাজি’, পরিচালকের বিরুদ্ধে টাকা সরানোর অভিযোগ

১২ শিক্ষার্থীকে ৬৪ জন দেখিয়ে নেন অনুদান

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ছনুয়া খুদুকখালী রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাসের এতিম শিক্ষার্থীদের নামে বড় অংকের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাস্তবে ১২ জন হলেও টাকা খাওয়ার ধান্ধায় সেটি ৬৪ জন দেখিয়ে বছরে প্রায় ১২ লাখ টাকা অনুদান নিয়েছেন তিনি। এভাবে সাত বছর ধরে ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে গেছেন ওই পরিচালক।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে তার এসব অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি শিশু নিবাসের পরিচালক আবু তৈয়ব। তিনি নিজের খেয়াল-খুশি মতো পরিচালনা করে আসছেন মাদ্রাসার কার্যক্রম।

তার এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরে গণস্বাক্ষর করা অভিযোগটি জমা দেয় এলাকাবাসী। সেই অভিযোগে উঠে আসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ’ছনুয়া খুদুকখালী রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাস’ প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা আমান উল্লাহ। একই বছর সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয় এতিমখানাটি, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১০৩১/৮৩। ওই এতিমখানায় কাগজে-কলমে ৬৪ জন এতিম শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে। এজন্য এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি মাসে ২ লাখ টাকা করে বছরে ১২ লাখ টাকা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানে এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ জন।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী ওই প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠন ও সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবু তৈয়ব পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে করা পরিচালনা কমিটির তালিকা জমা দিয়ে আসছে সমাজসেবা অধিদপ্তরে।

সাধারণত বেসরকারি এতিমখানাগুলোর শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয়, যেটি ‘ক্যাপিটেশন গ্রান্ট’ নামে পরিচিত।

কিন্তু ওই এতিমখানার ‘ক্যাপিটেশন গ্রান্ট’ প্রকল্পে এতিম ছাত্রদের তালিকা তৈরি, অর্থগ্রহণ ও বণ্টন নীতি মানা হচ্ছে না উল্লেখ করে অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের পিতা-মাতা জীবিত আছেন। তাদেরও‘ক্যাপিটেশন গ্রান্ট’ প্রকল্পের আওতায় দেখানো হয়েছে। প্রতিবছর সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার আগে সমাজসেবা অধিদপ্তরের লোকজন সরেজমিন আসলে সেখানে অনেক শিশুকে ভুয়া শিক্ষার্থী বানিয়ে তাদের দেখানো হয়।

জানা গেছে, এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি মাওলানা রিদুয়ানুল হক নামের এক স্থানীয় ব্যক্তিকে মাদ্রাসা ছাত্রদের দিয়ে পেটানো হয়। এই ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মাওলানা রিদুয়ানুল হক। ওই মামলার আসামি তালিকায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আবু তৈয়বের নামও রয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছনুয়া খুদুকখালী রহমানিয়া বায়তুল হিফজ শিশু নিবাসের পরিচালক মাওলানা মুফতি আবু তৈয়ব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযোগটি মিথ্যা, এটি ষড়যন্ত্র। মাদ্রাসা ধ্বংস করার জন্য একটি পক্ষ লিপ্ত রয়েছে। আমার নামে যে মামলাটি দিয়েছে, ওইদিন আমি এখানে (মাদ্রাসায়) ছিলাম না, পটিয়ায় ছিলাম। আমাদের মাদ্রাসাটি পটিয়া মাদ্রাসার আওতায়। সেখানে গিয়েছিলাম মাদ্রাসার কাজে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল আলম বলেন, ‘এতিম শিক্ষার্থী দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘এই রকম একটি অভিযোগের কথা শুনেছি। যেহেতু অভিযোগটি দিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর বরাবরে, তাই তারা তদন্ত করবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!