চট্টগ্রামের আফগান ছাত্রীরা ‘অলৌকিক’ উপায়ে বেরিয়ে এল তালেবানের কবল থেকে (ভিডিও)

গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার তিন মাস পর জুনে চট্টগ্রাম থেকে আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিও) পড়তে আসা ১৬০ জন আফগান শিক্ষার্থী। ১৫ মাস পর তালিবান দেশটির ক্ষমতাভার নেওয়ার পর বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে তাদের বের করে আনা হল আফগানিস্তান থেকে। সোমবার (৩০ আগস্ট) চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের পক্ষ থেকে এক টুইট বার্তায় এই ছাত্রীদের আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসতে পারাকে ‘অলৌকিক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তারা সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে ‘অসাধারণ’ কিছু মানুষকে।

টানা দুইদিন কাবুল বিমানবন্দরের পাশে আটকে থাকার পর শনিবার (২৮ আগস্ট) চট্টগ্রামে পড়ুয়া এই ১৬০ আফগান শিক্ষার্থী মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি ফ্লাইটে কাতারের রাজধানী দোহায় পৌঁছান। সেখান থেকে যে কোনো সময় তারা ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

করোনা পরিস্থিতিতে এই শিক্ষার্থীরা গত বছরের জুনে আফগান দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ‘ক্যাম এয়ার’ এর একটি বিশেষ ফ্লাইটে আফগানিস্তানে ফিরে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতাভার নিলে এই শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রামে ফেরা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।

যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ফ্লাইটে কাবুল থেকে কাতারের দোহায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছান চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিও) আফগান ছাত্রীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ফ্লাইটে কাবুল থেকে কাতারের দোহায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছান চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিও) আফগান ছাত্রীরা।

জানা গেছে, এই ১৬০ জন আফগান ছাত্রীর জন্য বিশেষ একটি ফ্লাইট ছাড়ার অনুমতি একবার দিয়েছিল তালিবান কর্তৃপক্ষ। এমনকি তাদের বোর্ডিং পাসও তৈরি ছিল। কিন্তু এরপরই এতগুলো আফগান মেয়ে একত্রে দেশের বাইরে গেলে তালিবানের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় কিনা— তা নিয়ে দোটানায় পড়ে যায় তালেবান কর্তৃপক্ষ। এরপরই তারা অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আটকে দেয়। এরপর থেকে দফায় দফায় চেষ্টা করেও তারা কাবুল বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকতে পারছিলেন না।

মূল সমস্যা ছিল তালেবানের সামনে দিয়ে এই ছাত্রীদের কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নিয়ে আসা। কাবুল ছাড়ার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছানো তাঁদের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। শুরুতে দুই দফা ব্যর্থ হন তারা। কাবুল ছাড়ার জন্য টানা ৪০ ঘণ্টা গাদাগাদি করে সাতটি বাসের বহরে তাদের অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে। এই যাত্রার সমন্বয় করেছেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থী সেপেরা আজমী ছাড়াও আরও ছয় শিক্ষার্থী। শেষপর্যন্ত সব উদ্বেগ কাটিয়ে শনিবার (২৮ আগস্ট) ওই ছাত্রীরা কাবুল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এক সামরিক ফ্লাইটে কাতারের দোহায় পৌঁছেছেন।

কাতারের দোহায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছার পর আফগান ছাত্রীরা।
কাতারের দোহায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছার পর আফগান ছাত্রীরা।

সোমবার (৩০ আগস্ট) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি কামাল আহমেদ এক খোলা চিঠিতে লিখেছেন, ‘৩০ জুন আমি লিখেছিলাম, সম্ভবত আমাদের সম্প্রদায়ের আর কোনো গোষ্ঠী আমাদের আফগান শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মতো ভয়ংকর অস্তিত্ব সংকটে পড়েনি। ন্যাটো বাহিনী যখন আফগান মাটি থেকে দ্রুত বিদায় নিচ্ছিল, তালেবান ততক্ষণে শতাধিক শহর দখল করে নিয়েছে। কাবুল নিয়ে আতঙ্ক ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তালেবানের বিশ্বাস ও পদ্ধতি নিয়ে আমাদের কোনো বিভ্রান্তি নেই। আমাদের শিক্ষার্থী বা সাবেক শিক্ষার্থীদেরও নেই। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা কেবল আমাদের শিক্ষার্থীই নয়, গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের কোর্সের জন্যএ বং তাদের দেশের আরো ভালো দিনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এইউডাব্লিউতে ফিরতে ইচ্ছুক এমন সাবেক শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের সেই চেষ্টা সফল হয়েছে।’

আফগানিস্তানে সরাসরি বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানের বাংলাদেশের দূতাবাসই আফগানিস্তানবিষয়ক বিষয়গুলো দেখাশোনা করে থাকে। এ কারণে চট্টগ্রামে অধ্যয়নরত ওই আফগান ১৬০ শিক্ষার্থীর ভিসার ব্যবস্থাও হয় উজবেকিস্তান দূতাবাস থেকে।

২০০৮ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করে। এ অঞ্চলে এটিই এ ধরনের প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের শিক্ষা, নেতৃত্ব, উন্নয়ন ও বিকাশে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ ছাড়াও আফগানিস্তান, ভুটান, কম্বোডিয়া, কানাডা, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ভিয়েতনামসহ ১৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়াশোনা করছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!