চট্টগ্রামের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারে বিদ্যুৎ নেই ৬ মাস ধরে, বিল বকেয়া ৭ লাখ

৬ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় চট্টগ্রামের আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে ৬ মাস ধরে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ল্যাব পরীক্ষাও।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নাকি আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি)— কে পরিশোধ করবে বকেয়া টাকা এ টানাপোড়েনে পরিশোধ হচ্ছে না বিদ্যুৎ বিল।

ফলে গত জুন থেকে চসিক পরিচালিত আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের কোন যন্ত্রপাতিই চালানো যাচ্ছে না। এতে বন্ধ রয়েছে ল্যাব। এছাড়াও জ্বলে না বাতি, চলে না ফ্যান। চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদ্যুৎ না থাকায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন এমন যন্ত্রপাতি ও ফ্রিজ নষ্ট হতে চলেছে। প্রায় এক বছর ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে থাকায় আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় গত জুন মাসে।

চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর বিবিরহাটে ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালে এশীয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এবং আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি খাদ্য পরীক্ষাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের খাদ্য পরীক্ষাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এই পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এখনও এভাবেই চলছে। এটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

সরেজমিনে গেলে অফিস ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে কাউসার পাটোয়ারী জানান, গত জুন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় কোন কাজই হচ্ছে না এ ল্যাবে। প্রায় ৭ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিশোধ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি জানান।

আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের ল্যাব ইনচার্জ সিনিয়র রাসায়নিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় আমরা কোনো কাজ করতে পারছি না। বিদ্যুতের জন্য নতুন আসা ৪০টির মতো এসি, যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে পারছি না। এছাড়া কিছু যন্ত্রপাতি ও ল্যাবের উপাদান যাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন, এখন সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানের ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে এ ল্যাবে। প্রায় ৬ মাস যাবত সবাই বেকার সময় কাঠাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজার থেকে স্যানেটারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংগৃহীত খাদ্য নমুনার পরীক্ষা হয় এ ল্যাবে। তবে পরীক্ষায় বিভিন্ন ভেজাল খাদ্যদ্রব্যে বাজারের বিক্রির প্রমাণ পেলেও কোন সাইনিং অথরিটি না থাকায় আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না।

বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) নির্বাহী প্রকৌশলী এএফএম নুর উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় এক বছর ধরে বিদ্যুতের বিল দিচ্ছিল না আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগার। ফলে আমরা গত জুন মাসে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি। আমাদের পাওনা টাকার পরিমাণ ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮২ টাকা। ওই টাকা পরিশোধ হলেই আমরা পুনসংযোগ দিতে পারবো। কিন্তু এখনও তারা বিল পরিশোধ করেনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এটি দেখভাল করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এটা ঠিক। কিন্তু এখনও প্রজেক্ট থেকে করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরা সম্পূর্ণ বুঝে নেওয়ার পর এটির সব দায়দায়িত্ব আমাদের ওপর। আমরা অর্গানোগ্রামের অনুমোদন চেয়েছি অনেক আগেই।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পরীক্ষাগারটি এখনও পর্যন্ত করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বর্তমানে ইউপিইএইচএসডিপির আওতায় খাদ্য পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পরীক্ষাগারে কর্মরত আছেন ১৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রকল্প থেকেই তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে।

জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার পর পরীক্ষাগার কর্পোরেশনের আওতায় পরিচালিত হবে। পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০১৬ সালে ২৩ পদের বিপরীতে ৩৪ জনের পদ সৃষ্টি করে জনবল কাঠামো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিভিন্ন ধাপ শেষে এখন ১৯ জনের জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!