চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে ভোটের আঁচ, মেয়াদছাড়া কমিটির সঙ্গী কোন্দলের জ্বালা

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ বাড়ছে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে। দলগুলো নানাভাবে সাংগঠনিক শক্তির জানান দিচ্ছে। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণের মন জয় করতে নানামুখী কর্মসূচিও দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে নৌকার জন্য ভোট চেয়েছেন। তবুও চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে বিরাজ করছে স্থবিরতা। এর জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়াকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা। পদধারী নেতারা বারবার ঐক্যের কথা বললেও জিইয়ে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলই রাজনৈতিক দলগুলোর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়বে ভোটেও। রাজনীতির মাঠ দখলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের ভূমিকাই মুখ্য। অথচ চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অবস্থা বেহাল।

এছাড়া যুব মহিলা লীগ, তাঁতী লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, কৃষক লীগ এবং মৎস্যজীবী লীগের চোখে পড়ার মতো সাংগঠনিক কর্মসূচিও নেই।

চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে দুটি বলয় রয়েছে। একটি মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারী বলয়, অন্যটি সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার বলয়টির হাল ধরেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোতেও রয়েছে এই দুই বলয়। দলীয় কর্মসূচিও নিজেরা আলাদাভাবে পালন করছে নিয়মিত।

সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও আলাদাভাবে পালন করেছে দুই বলয়ের নেতাকর্মীরা। দুই বলয় সবসময় সক্রিয়, আবার কখনও কখনও মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। দুই বলয়ের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন সময়। এসব কারণে ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে মহানগর আওয়ামী লীগ গত বছর থেকে দলকে সংঘটিত করার উদ্যোগ নেয়। মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিট থেকে শুরু হয় সম্মেলন ও কমিটি গঠন। তবে দলীয় কোন্দলে তা হোঁচট খায়। বার বার উদ্যোগ নিয়েও ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে সম্মেলন শেষ করা যায়নি। মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ দিয়েও তা পেছানো হয়।

সর্বশেষ ৪ ডিসেম্বরে সম্মেলন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভার জন্য তা পিছিয়ে ১৮ ডিসেম্বর করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেই সম্মেলনও হয়নি। বলা হয়েছে, জাতীয় সম্মেলনের পর সুবিধাজনক সময়ে সম্মেলন এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাওয়ার পর মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।

এদিকে মহানগর ছাত্রলীগের অবস্থা আরও নাজুক। দুই বলয়ের কোন্দলের পাশাপাশি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৯ বছর আগে। ২০১৩ সালে এক বছরের জন্য সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি করা হয়। কিন্তু সেই কমিটির বয়স এখন পুরো এক দশকের দুয়ারে। কমিটির অনেকেই বিয়ে করে পেতেছেন সংসার, অনেকে ব্যস্ত চাকরি-ব্যবসা নিয়ে। কিন্তু কমিটি চলছেতো চলছেই, বছরের পর বছর ধরে।

আট মাস আগে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হয়েছে যুবলীগের সম্মেলন। সম্মেলন হলেও কমিটি হয়নি এখনও। এর আগে ২০১৩ সালে তিন মাসের জন্য করা হয়েছিল নগর যুবলীগের কমিটি। তিন মাসের সেই কমিটিও বহাল ছিল ৯ বছর।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি হয়েছে গত বছরের মার্চে। আংশিক কমিটি পার করছে প্রায় এক বছর, তবুও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর অবস্থাও বেহাল।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ-যুবলীগ আমাদের মাঠের কর্মী। কমিটি না থাকায় কর্মীরা হতাশ। কিন্তু সেটা ভোটে তেমন প্রভাব ফেলবে না। নৌকার জন্য তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। তবে কমিটি থাকলে কর্মীরা আরও সক্রিয় থাকতো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!