চট্টগ্রামের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুত, চলছে যাচাই-বাছাই

আওয়ামী লীগ

অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে। সেই তালিকায় চট্টগ্রামে কারা আছে— তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনা।

দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতেই দলীয় সভানেত্রীর পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ও এনামুল হক শামীমের কাছে চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকা হস্তান্তর করেছেন। তবে এই তালিকায় চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় কয়জন অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে— তা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউই। প্রধানমন্ত্রীর করা সেই তালিকা বর্তমানে যাচাই বাছাই করা হচ্ছে সূত্রের দাবি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই তালিকাসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চট্টগ্রামে আসছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগে এক হাজার ৫০০ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করিয়েছেন। তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। সেখানে তালিকাভূক্ত কেউই যাতে স্থান না পায়, সেই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা যাচ্ছে তৃণমূলে।

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় কারা রয়েছে তা উল্লেখ করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে যারা আসে, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ভূমিদস্যু, যাদের ইমেজ খারাপ, যাদের রাজনীতি জনগণের কাছে খারাপ— এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছেন এবং তার কাছে এই তালিকা আছে।’

দলীয় সভানেত্রী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব লোক দিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের এই তালিকা তৈরি করেন। ৯ কলামের এই ছকে প্রথম কলামে ক্রমিক নম্বর রয়েছে। দুই নম্বর ছকে নাম ও ঠিকানা। তিন নম্বর ছকে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে কোন সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন এবং পদবি কী ছিল। চতুর্থ ছকে রয়েছে যোগদানকৃতদের বংশ পরিচয় ও রাজনৈতিক তথ্য। পঞ্চম ছকে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা। ষষ্ঠ ছকে রয়েছে আওয়ামী লীগের যোগদান করার পর পদ-পদবি। সপ্তম ছকে রয়েছে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর কোনও পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে কিনা। অষ্টম ছকে রয়েছে মামলা সংক্রান্ত তথ্য। নবম ছকে রয়েছে মন্তব্য।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা আমরা পাইছি গতকাল (শুক্রবার) রাতেই। আমরা দেখি যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা দেখে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠাব। তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় কতজন অনুপ্রবেশকারীর নাম আছে তা জানতে চাইলে এনামুল হক শামীম বলেন, ‘না, মোট কতজন সেটা বলতে পারব না। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সম্পাদক হানিফ ভাইসহ বসে আমরা যাচাই-বাছাই করছি। মাঠের চিত্রের সাথে তালিকার নাম যাচাই করা হচ্ছে। তালিকার নাম ও বাস্তবতা কী— তা যাচাই করা শেষেই আমরা কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে রংপুরসহ কয়েকটি বিভাগের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রকাশ হলেও চট্টগ্রাম বিভাগেরটা কবে হবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অন্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কী করেছেন তা আমি জানি না। আমি আর হানিফ ভাই চট্টগ্রাম বিভাগের লিস্টটা নিয়ে কাজ করছি। তা যথাসময়ে কার্যকর করা হবে।’

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘তালিকা পাঠানোর কথা ফোন করে বলেছিলেন। কিন্তু এখনও কোনও তালিকা পাইনি। পেলে কেন্দ্র থেকে যেভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের তালিকাটা এখনও আমাদের হাতে আসেনি। আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!