চট্টগ্রামসহ সড়কপথে চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত, পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ যাবে হটলাইনে

চট্টগ্রামসহ সড়কপথে বিভিন্ন সংগঠন, পুলিশ ও ব্যক্তির নামে পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলে তা জানাতে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। এদিকে ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ায় সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান লরি প্রাইমুভার মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ পরিবহন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নামে চাঁদা আদায় বহাল থাকছে। এ ধরনের সংগঠনের নামে প্রতি ট্রিপে ৩০ টাকা করে মোট ৬০ টাকা আদায় করা যাবে। প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট স্থানে এ চাঁদা আদায় করবেন দুই সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রুদ্ধদ্বার এক সভায় পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিবহন নেতা ও সাংসদ শাজাহান খান বলেন, পরিবহন থেকে চাঁদাবাজির বিষয়ে কঠোর আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদা নেওয়া যাবে না। এক জেলার এক স্থানে মালিক সংগঠনের নামে ৩০ টাকা ও শ্রমিক সংগঠনের নামে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ সংগ্রহ করতে পারবে। এর বেশি কেউ টাকা নিতে পারবে না। বিভিন্ন জেলা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নামে ইজারা দিয়ে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে টার্মিনাল ব্যবহার করলে সেজন্য চার্জ দিতে হবে। পুলিশের কোনো সদস্য চাঁদাবাজি করলে হটলাইনে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরেক পরিবহন নেতা ও সাংসদ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন জেলায় শ্রমিকের নামে অনেক ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে উঠেছে। এসব সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করা হয়। পুলিশ কাগজপত্র চেক করার নামেও হয়রানি করে। আমরা এসব বন্ধের জোরালো দাবি জানিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। তিনি আমাদের বলেছেন, পথে পথে চাঁদাবাজি থাকবে না।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মহাসড়কে অবৈধ চাঁদা আদায়, পুলিশের মাসিক মাসোহারা বন্ধসহ ১০ দফা দাবিতে সোমবার ও মঙ্গলবার সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ট্যাংকলরি প্রাইমমুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। ওই কর্মসূচি শুরুর আগের দিন রোববার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে।

বৈঠকে পরিবহন নেতারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কিছু পুলিশ সদস্য গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও মাসিক মাসোহারার জন্য মালিক ও শ্রমিকদের চাপ দিচ্ছে। চাঁদা না দিলে নানাভাবে হয়রানি করছে। গাড়ির কাগজপত্র চেকের নামে দুই থেকে তিন হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ নিয়ে আপত্তি করেন একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তারা বলেন, অনেক গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স ঠিক নেই। সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। সভায় হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হটলাইন নম্বর পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দেওয়া হয়। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ থাকলে ওই নম্বরে জানাতে বলা হয়েছে।

সভায় পরিবহন নেতারা দাবি তোলেন, মহাসড়কে শুধু হাইওয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ির কাগজপত্র চেক করবে। একইভাবে সিটি এলাকায় মহানগর পুলিশ নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ির কাগজপত্র চেক করবে। তবে তাদের এ দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সভায় তিনি বলেছেন, কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে যে কোনো স্থানেই তল্লাশি করা যাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!