চট্টগ্রামসহ দেশের ৬ হাসপাতাল পেল এস আলমের আইসিইউ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম

করোনায় লাশের সারিতে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। আইসিইউ ভেন্টিলেটরের অভাবে মারা যাচ্ছে তাদের কেউ। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবেও কাউকে যেতে হয়েছে পরপারে। সরকারি সুবিধায় পরিচালিত হাসপাতালগুলোতে থাকা আইসিইউ ভেন্টিলেটর আর অত্যাধুনিক অক্সিজেন চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।

দুর্যোগের এমন সময়ে ৬ কোটি টাকার ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ ও ন্যাসাল ক্যানুলা (অক্সিজেন) নিয়ে হাত বাড়ালেন চট্টগ্রামেরই সন্তান এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাইফুল আলম মাসুদ। বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা এই শিল্পপিতির নির্দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে দেশের ছয়টি হাসপাতালে ছয় কোটি টাকার ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম দেওয়া হল।

জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৬টি হাসপাতালে করোনার এ দুঃসময়ে জীবন বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকায় এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১৬টি ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ। আমেরিকার তৈরি প্রতিটি ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ কেনা হয় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দরে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডের তৈরি এয়ারবু আটটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা (অক্সিজেন)। প্রতিটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের এই অত্যাধুনিক আটটি কিনতে ব্যয় হয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫০ টাকার সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করে এস আলম গ্রুপ।

এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রথমবারের মত করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এখন থেকে ব্যবহৃত হবে এস আলম গ্রুপের দেওয়া অত্যাধুনিক হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা (অক্সিজেন)।

এর আগে গত ২৯ মে ঢাকার ধানমণ্ডিতে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মোট আটটি ভেন্টিলিটরযুক্ত আইসিইউ শয্যা বুঝিয়ে দেওয়া হয় এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার (২ জুন) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য চারটি ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ, চারটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জন্য দুটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জন্য দুটি ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ ও দুটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জন্য একটি করে ভেন্টিলেটরযুক্ত আইসিইউ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

এর আগে এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য ৫০০টি পিপিই প্রদান করা হয়। এছাড়া চিকিৎসকদের ডিউটি রুমের জন্য দুটি দুই টনের এসি, দুটি নমুনা কালেশন বুথ স্থাপন করা হয়।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইনে থাকা চিকিৎসকদের খাবারের জন্য এস আলম গ্রুপ এক লাখ টাকা দিয়েছে। এছাড়া এই হাসপাতালের জন্য একটি দুই টন এসি, দুইটি নমুনা কালেকশন বুথ স্থাপন করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া বিআইটিআইডির চিকিৎসকদের ডিউটি রুমের জন্য একটি দুই টন এসি, দুটি নমুনা কালেকশন বুথ ও চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিটিতে ৫০টি করে ৭০০ পিপিই দিয়েছে এস আলম গ্রুপ।

গত ২২ মে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান এস আলম এস আলম পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং শিল্পপতি সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই মোরশেদুল আলম। চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যার সংকটের কারণেই এস আলম পরিবারের এই জ্যেষ্ঠ সদস্যের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

এখনও করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ছেন এস আলম চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পাঁচ ভাইসহ তার পরিবারের মোট ৮ জন সদস্য। এরা হলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের মা ৮৫ বছর বয়সী চেমন আরা বেগম, ২৬ বছর বয়সী ছেলে আহসানুল আলম মারুফ, পাঁচ ভাই এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৬০ বছর বয়সী রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ৫৩ বছর বয়সী আবদুস সামাদ লাবু, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম, এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৪৫ বছর বয়সী ওসমান গণি ও তার ৩৬ বছর বয়সী স্ত্রী এবং ভাইপো মাহমুদুল আলম আকিবের স্ত্রী।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!