চট্টগ্রামফেরত এক গার্মেন্টস কর্মী দিয়ে শুরু চকরিয়ায় ৮৬ করোনা রোগী

এখনও অধিকাংশই মানেন না স্বাস্থ্যবিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। করোনার হটস্পর্টে পরিণত হয়েছে চকরিয়া। মূলত হোম কোয়ারান্টাইন বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইন না মানায় দিন দিন বাড়ছে করোনার প্রকোপ। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে উপজেলাজুড়ে। তবে আতঙ্ক দেখা দিলেও থামছে না শপিং করা আর বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা। প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালিয়েও ঘরে ঢোকাতে পারছে না লোকজনকে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চকরিয়ায় বুধবার (২০ মে) পর্যন্ত ৮৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সুস্থ হয়েছে ১৭ জন। মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬১৩টি। এদের অধিকাংশই সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম গার্মেন্টেসে কর্মরত এক কর্মকর্তার মাধ্যমে চকরিয়ায় প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এরপর থেকে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। এখন আক্রান্ত রোগীর দিক দিয়ে জেলার মধ্যে চকরিয়া শীর্ষে। এর মূল কারণ হচ্ছে সঠিকভাবে কোয়ারান্টাইন বা আইসোলেশন মেনে না চলা।

আরও জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ এবং ত্রাণ সহায়তা করতে গিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. তাবভীর হোসেন করোনায় আক্রান্ত হন। পরে সেবা দিতে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. নাহিদা আক্তার, নার্স, সিএইচসিপি মাঈনুল হোসেন চৌধুরী, ওয়ান ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন, তার ছোটভাই নাজেম উদ্দিন, পল্লী চিকিৎসক সুজন দেব, স্বপন মল্লিক, উপজেলা পরিষদের অফিস সহকারি ছৈয়দ আকবরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়ম রয়েছে যারা করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা দিবে তারা রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত হোম কোয়ারান্টাইনে থাকবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ লোকজন নমুনা পরীক্ষা দেওয়ার পর পরই তারা যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাজারে যাচ্ছে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। একসাথে বসে চা-নাস্তা করছে। এসবের কারণে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত ওয়ান ফার্মার এরিয়া ম্যানেজার মো. নাসির হোসেন বলেন, চাকরির সুবাদে প্রতিদিন বাইরে যেতে হতে হয়। অবশ্যই বাইরে বের হওয়ার আগে মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই বের হই। তারপরও আমি আক্রান্ত হয়েছি একজনের সংস্পর্শে গিয়ে।

তিনি আরও বলেন, আমার এলাকার এক যুবক করোনার নমুনা টেস্ট দেয়। এরপর থেকে যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছিল। এরমধ্যে একটি বিচারের সুবাধে তার সাথে আমার দেখা হয়। ওখানে একপর্যায়ে সে আমার সংস্পর্শে চলে আসে। আমি তখনও জানাতাম না সে করোনা টেস্ট দিয়েছে। পরদিন জানতে পারি সে করোনায় আক্রান্ত। পরে আমি টেস্ট করালে আমারও পজিটিভ আসে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, নিয়ম হচ্ছে একজন রোগী যখন নমুনা পরীক্ষা দিবেন তখন থেকেই তাকে রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত কোয়ারাইন্টাইন মেনে চলতে হবে। যেহেতু আমাদের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইন নেই, তাদেরকে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করি হোম কোয়ারান্টাইন মেনে চলতে। কিন্তু বেশিরভাগই নিয়ম মানছে না। ফলে দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে চকরিয়া এলাকা।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!