চট্টগ্রামজুড়ে ভেজাল ঘিয়ের ছড়াছড়ি, কমিশন খেয়ে অনুষ্ঠানে ঢালেন বাবুর্চিরা

চট্টগ্রামে নিরবে চলছে ভেজাল ঘিয়ের রমরমা ব্যবসা। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়াই বিয়ে-জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব ঘি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে কমিউনিটি সেন্টারের বাবুর্চিরাই এসব ঘি বিক্রির নেপথ্যে রয়েছেন। বাবুর্চিদের সঙ্গে বড় অংকের টাকার চুক্তিতে নিম্নমানের এসব ঘি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আর এসব ভেজাল ঘি খেয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবদেহ। মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে এসব অননুমোদিত ভেজাল কোম্পানি।

সাধারণত আকিকা, জন্মদিনসহ প্রায়ই অনুষ্ঠান কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়, সেখানে রান্নার দায়িত্বে থাকা বাবুর্চিদের সঙ্গে আগে থেকেই চুক্তি থাকে ভেজাল ঘি বিক্রেতাদের। এজন্য বাবুর্চিদের দেওয়া হয় বড় অংকের অগ্রিম টাকা। টাকা খেয়ে এসব ভেজাল ঘি কাস্টমারকে মালামাল কেনার স্লিপে লিখে দেন তারা।

গত ১৯ জানুয়ারি কর্নেলহাট একটি কমিউনিটি সেন্টারে এক বিয়েতে নিম্নমানের ঘিয়ে রান্না করা খাবার খেয়ে ৯ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বাজার, কর্নেলহাট, হালিশহর ফইল্যাতলী বাজার, স্টিলমিল বাজার, ঈশান মিস্ত্রি হাট, সীতাকুণ্ড বাজারে গিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডে নিম্নমানের ঘি। এরমধ্যে রয়েছে ‘গনি ঘি’, ‘সুপার মিল’, ‘কিউ বিবিমাজারিন’, ‘অস্ট্রেলিয়ান’, ‘এমএ ঘোষাল বাটার’, ‘এমএ ঘোষাল প্রিমিয়াম’, ‘এমএ ঘোষাল সুপার‘, ‘স্টার গোল্ড ঘি’, ‘স্টার গাওয়া ঘি’।

এছাড়া বৃহস্পতিবার কর্নেলহাটের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্নায় ব্যবহার করা হচ্ছে ’এমএ ঘোষাল ঘি’।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় রয়েছে গনি ঘিয়ের গোডাউন, আকবরশাহের কমিউনিটি সেন্টার মোড়ে সুপার মিল গোডাউন থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন ‘ম্যানেজ’ করে চলছে ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসা। এমএ ঘোষাল ঘিয়ের ফ্যাক্টরি নোয়াখালীতে উল্লেখ করা হলেও ওই কোম্পানির কারখানার কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে।

এছাড়া পলাশ নামের এক ব্যক্তি পাহাড়তলী বাজার, কর্নেলহাট বাজারে ভেজল ঘি সরবরাহ করেন। অস্ট্রেলিয়ান ঘি কোম্পানির গোডাউন বন্দরের ঈশান মিস্তি হাট এলাকায় বলে জানা গেছে।

কিউ সুপার বি, স্টার গোল্ড কোম্পানির কারখানার কোনো অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বিএসটিআই অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাজারে এই ধরনের ভেজাল ঘিয়ের ব্যবসা করছে একশ্রেণির অসাধু চক্র। তবে এসব ঘি কোম্পানি কোনটির অনুমোদন নেই।

এসব ঘিয়ের ব্যবহার নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাবুর্চি বলেন, ‘এই ধরনের পাঁচটি কোম্পানির সঙ্গে আমার মাসিক চুক্তি রয়েছে। তারা আমাকে অগ্রিম টাকা দিয়েছে। শুধু আমি নই, আমার মতো অনেক বাবুর্চিকে তারা টাকা দেয়; এসব ঘি চালানোর জন্য। এসব টাকার পরিমাণ কোম্পানিভেদে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব কোম্পানির ঘি আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাস্টমারদের স্লিপে লিখে দিই। টাকা ছাড়াও অনেক সময় টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন উপহার দেয় আমাদের।’

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আপনাদের কাছে তথ্য থাকলে দিন, দ্রুত এসব ভেজালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো আমরা।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!