চকরিয়ায় ৮বছরে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন

চকরিয়ায় ৮বছরে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন বদলের সনদ হিসেবে রুপকল্প ২০২১ উপস্থাপন করেন ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে। ফলশ্রুতিতে ২০০৯ থেকে বাংলাদেশের দিন বদলে যেতে থাকে। তারই ছোয়া পড়েছে কক্সবাজারের চকরিয়াতেও। এই উপজেলা ফি-দিন উন্নয়নের সান্নিধ্য পাচ্ছে। নতুন রুপ পাচ্ছে প্রতিটি এলাকা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের আস্তা বাড়ছে সরকারের প্রতি।
গ্রামীন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণসহ শিক্ষার আধুনিকায়ন, কমিউিনিটি ক্লিনিক পুনুরুজ্জীবন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান উন্নয়নসহ সরকারের অনেক কর্মসুচি দ্রুত বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ট নেতৃত্বে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ থেকে নি¤œ-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। লক্ষ্য এখন আরো বিস্তৃত। ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ। বাংলাদেশের সাফল্য এখন বিশ্বব্যাপী উদাহরণ। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার এমডিজি’র ৮টি অভিলক্ষ্যের মধ্যে ৫টি অভিলক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ক্ষুদা-দারিদ্রপীড়িত, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার একটি অসহায় দেশের চিরন্তন রুগ্ন প্রতিচ্ছায়া থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান ব্যাঘ্র।
এই রুপকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম সরকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি কাজ করছে নিরলশভাবে। উন্নত দেশের উপযোগী, উন্নত গ্রাম ও নগর গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এলজিইডি কাজ করছে। একইভাবে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নেও কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের রুপকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চকরিয়া উপজেলায় বিগত ৮ বছরে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনেক কাজ বাস্তবায়নাধীন ও পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
এলজিইডি সুত্র জানায়, ৮বছরে চকরিয়ায় ১১ কোটি ১৭ লাখ টাকায় ৪২.৫ কিলোমিটার পল্লী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে নির্মাণ চলছে ২২.৯১ কিলোমিটার সড়কের কাজ। আগামী দু’বছরে ৪১ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হবে।
এসময়ে ৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০.২০ কিলোমিটার পল্লী সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে ৫.৮০ কিলোমিটার সড়কের।
২০০৯-২০১৬ অর্থবছরে কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩’শ ৫৯ মিটার দৈঘ্যের ১৬টি ব্রীজ/কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। চলমান রয়েছে ৪৯ মিটার ব্রীজ/কালভার্টের কাজ।
একইসময়ে কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও ৮টি ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়। কাজ চলমান রয়েছে দুটির। আরো ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের টানা মেয়াদকালে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন ১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত। ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের ১২’শ হেক্টর জমির পানি সম্পদ উন্নয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে কাজ চলছে তিনটি উপ-প্রকল্পের। তিন কিলোমিটার খাল খনন এবং দুটি স্লুইস গেট/রেগুলেটর/রাবার ড্যাম নির্মাণের। আগামী ২ বছরের মধ্যে আরো দুটি উপ-প্রকল্প উন্নয়নের প্রক্রিয়া চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
৮বছরের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার মধ্যে ২কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য যাদুঘর কাম লাইব্রেরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অফিস, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটসহ সাড়ে ৭ হাজার বর্গফুটের ভবণ তৈরীর কাজ প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি আর্থিকভাবে অচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চকরিয়ায় একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও দুটি বাসগৃহ নির্মিত হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি ও তহবিলের ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১’শ ৩১টি প্রকল্পের কাজ চলছে।
এছাড়া চকরিয়া উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৮বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার খাতে কাবিখা ও কাবিটার ৭ হাজার ৪৯৭ দশমিক ৫৮৩৫ মেট্রিক টন খাদ্য এবং নগদ ৫কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৩ টাকায় ৮’শ ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণে টিআরের ৪ হাজার ৭৯১টি প্রকল্প (মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, রাস্তা উন্নয়ন এবং সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন) বাস্তবায়ন করা হয়েছে ৫৯৩৮দশমিক ০১৯১ মেট্রিক টন খাদ্য এবং কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ২৪৮ টাকা ব্যয়ে। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের (ইজিপিপি) ১৪৩১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৯ টাকা ব্যয়ে। ৩৮টি সেতু/কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে ১০ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ২২৪ টাকা ব্যয়ে।
এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির ভিজিএফএর আওতায় ৫ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন খাদ্য বরাদ্দে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৮৪০ পরিবারকে উপকারভোগীর তালিকায় আনা হয়েছে। ১৬৪টি পরিবার ও দুটি প্রতিষ্টানকে ৩’শ ৪ বান ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণ মঞ্জুরী খাতে ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। একই দপ্তর থেকে ৩ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৯০ টাকায় দুটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম বলেন, উপরোক্ত দুটি সরকারী সংস্থা ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপদ, ভুমি, বিদ্যুৎ ও শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সরকারী অন্তত ২২টি দপ্তর এলাকার উন্নয়নে কাজ করছে। এলাকা ভিত্তিক অগ্রাধীকার ভিত্তিতে যেভাবে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী দু’বছরের মধ্যেই পুরো চকরিয়া নতুন রুপে সজ্জিত হবে।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, পাক সেনাদের হটিয়ে হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদেরকে বাংলাদেশ উপহার দিয়েছিলেন। তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে খাদ্যভাব দুরকরাসহ নানাভাবে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে দিয়ে ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বরাদ্দে চকরিয়ায় শহীদ আবদুল হামিদ বাস টার্মিনাল, দুটি বিশাল রাবার ড্যাম, চকরিয়া-মহেশখালী সংযোগ সড়ক, সুরাজপুর সেতুসহ জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!