চকরিয়ায় বৃদ্ধকে মারধর, ভিডিও ভাইরালের পর প্রশাসনের তোড়জোড়

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নে নুরুল আলম (৭২) নামে প্রবীণ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করে যুবলীগ নেতা আনছুর আলমের মারধরের একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মঙ্গলবার দুপুর থেকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওটি নজরে এসেছে স্থানীয় এমপি জাফর আলম, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্টদের। এর পরই ঘটনায় জড়িত যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে নেমেছে।

ভিডিতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক ওই বৃদ্ধ নুরুল আলমকে মারছে কিল-ঘুষি, পরনের লুঙ্গি, গেঞ্জি টেনে ছিড়ে ফেলছে সাথে সাথে অসভ্য গালিগালাজও করছে। আর কয়েকজন যুবক তা মোবাইলের ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করছে। তবে কেউ এগিয়ে আসেনি ওই বৃদ্ধকে বাঁচাতে। এভাবেই হেনস্থা করা হয়েছে বয়োবৃদ্ধ নুরুল আলমকে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নজরে আসে সবার।

গত ২৪ মে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়কুড়ি টিক্কাপাড়ায় মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটির পুরো নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় সন্ত্রাসী আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল যুবক।
এ ঘটনার পর গত ৩১ মে রাতে বৃদ্ধ নুরুল আলমের ছেলে আশরাফ হোসাইন বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। তবে, এজাহারটি এখনো তদন্তাধীন বলে জানা গেছে।

এজাহারে বাদি দাবি করেছে, গত ২৪ মে আমার বয়োবৃদ্ধ বাবা নুরুল আলম ঈদের বাজার করে ঢেমুশিয়া স্টেশন থেকে টমটম গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে আনছুর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী টমটম থেকে আমার বাবাকে নামিয়ে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে গায়ে থাকা লুঙ্গি, গেঞ্জি ছিড়ে ফেলে। পাশাপাশি মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। কয়েকজন যুবক এসব ঘটনার মোবাইলের ক্যামরাতে ধারণ করে। এসময় আমার বাবা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে।

পরে ঘটনাটি শোনার পর আমার ছোট ভাই সিএনজি চালক সালাহউদ্দিন স্থানীয় লোকজনসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমার বাবাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা করান।

মামলার বাদি আশরাফ হোসাইন এজাহারে আরো দাবি করেন, ঘটনার সময় আমার বাবার ব্যবহৃত একটি মোবাইল সেট ও পকেটে থাকা নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেয়। আশরাফ হোসাইন আরো বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে আমার বাবার উপর এই হামলা করেন অন্যতম সন্ত্রাসী আনছুর আলম। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ট তদন্তপূর্বক প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, তুচ্ছ একটি ঘটনার জের ধরে এমন অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বয়স্ক নুরুল আলমের সাথে। তিনি এই এলাকার বয়োবৃদ্ধ। সবাই ওনাকে খুব সম্মান করে। এলাকার কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় এজাহার দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে আনছুর আলমের মোবাইলে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তার ছেলে আশরাফ হোসাইন একটি এজাহার দিয়েছি বলে শুনেছি। তবে এজাহারটি এখনো আমার হাতে আসেনি। এজাহারটি হাতে আসলে খুব তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) কাজী মো. মতিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি ফেসুবকে দেখেছি। যারা এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করেছে মোটেও ভালো কাজ হয়নি। ভুক্তভোগী ওই বৃদ্ধেরও পরিবার-পরিজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি।

ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বর্বরতা। ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং মামলা গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান বলে উপজেলার ফেসবুকে পেইজে জানান।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!