চকরিয়ায় আবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর, সম্পাদকে নতুন মুখ মুছা

চট্টগ্রামের চকরিয়ায় দীর্ঘ ৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষ হয়েছে অর্জন ও বর্জনের মধ্যদিয়ে। সম্মেলনে আবারও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেন জাফর আলম এমপি। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হলেও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আবু মুছা।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) চকরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে এ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

এর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, পৌর মেয়র আলমগীর চৌধুরীসহ একটি পক্ষ এইসম্মেলন বর্জন করে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের বিরুদ্ধে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে এ পক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর তালিকা তৈরিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ আনা হয়। এ সময় কাউন্সিলর তালিকা সংশোধন করে সম্মেলনের তারিখ পেছাতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের কাছে আবেদন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সংসদ সদস্য জাফর আলম সম্মেলনে নিজের লোকদের জয়ী করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সংগঠনের খালি প্যাডে স্বাক্ষর নেন। পরে ওই প্যাডে নিজের পছন্দের লোকদের কাউন্সিলর করেন।’

এদিকে শনিবার ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি বক্তব্যে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ মেহনতি মানুষদের নিয়ে। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি করবো, উনার আদর্শ মানবো না—সেটা আওয়ামী লীগের রাজনীতি হতে পারে না। আমরা গুটিকয়েক নেতা বড় বড় পদ-পদবি নিয়ে, নিজের আত্মীয়-পরিজন ও কিছু চামছা বাহিনী নিয়ে আওয়ামী লীগ করবো, এর নাম বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ না। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি মানে একজন সাধারণ মানুষকে বুকে আলিঙ্গন করে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে নিয়ে আসা। আওয়ামী লীগকে কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি বানানো যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন দেশের অবস্থা করুণ ছিল। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে। উনার সময় দেশ সর্বোচ্চ ৯.৬৩ শতাংশ পর্যন্ত জিডিপি অর্জন করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সে অগ্রযাত্রা থেমে যায়। পরে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই জিডিপি আবারও ৯ শতাংশের ওপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছেন।’

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জাফর আলমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, আজিজুর রহমান, যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক কাউছার উদ্দিন কছির।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে জাফর আলম সভাপতি ও গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!