চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বেড়েছে বানর

চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বেড়েছে বানর 1মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: সাত বছরের ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে হাঁটছিলেন মা-বাবা । এমন সময় একটি বানর এসে শু-মেরে নিয়ে যায় ছোট্ট বাচ্চাটির হাতে থাকা চিপসের পেকেট। এ চিত্র দেখে হতবাক হয়ে যায় বাবা-মা। আর ছেলে চিপসের জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। এসময় বাবা আরেকটি চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে ছেলেকে শান্তনা দিলে থামে কান্না। ঘটনাটি কক্সবাজারের চকরিয়াস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের। বিষয়টি চোখে পড়ে এ প্রতিবেদকের। কথা হয় ছেলেটির বাবা তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। জিজ্ঞেস করলাম ছেলের নাম কি। তিনি বললেন নিলয়।
কথা হয় তোফাজ্জল হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে গত তিনদিন আগে চাঁদপুর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছি। ছেলের আবদার ছিল সাফারি পার্কের বাঘ-সিংহ দেখার। তাই পার্কে আসা। এখানে এসে বানরের অবস্থা দেখেই দিন পুরিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সারাদেশের সব বানর এখানে এসে জড়ো হয়েছে। যেদিকে যাচ্ছি সেদিকে শুধুই বানর আর বানর। তবে ছোট্ট ছোট্ট বানরগুলোকে দেখে খুব মায়া লেগে যাচ্ছে। এখনতো আমার ছেলে বানর দেখে অন্যপ্রাণীদের কথা ভুলেই গেছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, সাফারি পার্কের গেইটে ডুকতেই চোখে পড়ে একঝাঁক বানর বসে রয়েছে। বেশ কয়েকটি মা-বানর তার ছোট্ট বাচ্চাকে বুকে আকড়ে ধরে রেখেছেন। অন্য বানরগুলো পার্কে আসা পর্যটকদের সাথে দুষ্টমি করছেন। পর্যটকদের হাতে কিছু দেখলেই তা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সব কিছু কেড়ে নিয়ে গেলেও আনন্দ পাচ্ছে পর্যটকরা। মনে হচ্ছে পার্কে আসা অন্যান্য প্রাণীদের দেখে যতটুকু মুগ্ধ হচ্ছেনা বানরের দুষ্টমিতে ততোবেশি মুগ্ধ হচ্ছে পর্যটকরা। আর পার্কে আসা ছোট্ট শিশুদের যেন খুশির শেষ নেই। বানরের বাদরামি দেখে ছোট্ট শিশুরা বাঘ-সিংহের কথা ভুলেই গেছে। পার্কের ভিতর যতই হাঁটছি ততই বানরের উৎপাত দেখছি। এগাছ থেকে ওই গাছ, রাস্তা, পাখির বেস্টনি, বাঘ-সিংহের বেস্টনি সবখানেই বানর আর বানর।
দেখা যায়, এক নব-দম্পতি পার্কে ভিতর পাখির বেস্টনির এক কর্ণারে বসে একান্তে কথা বলছিলেন। এসময় বানরের দল তাদের সাথে দুষ্টমি শুরু করে। একপর্যায়ে একটি বানর নব বধুর শাড়ির আঁচল ধরে টানাটানি শুরু করে। এসময় তার স্বামী একটি ডিল ছুড়ে কোন রকমে বানরদের তাড়ালেন।
কথা হয় নব-দম্পতি রায়হান ও তিথীর সাথে। তারা বলেন, বিয়ে হয়েছে মাসখানেক হয়েছে। চকরিয়ার হারবাং থেকে এসেছেন। চিন্তা ছিল পার্কে এসে একটু একান্তে সময় কাটাবো। কিন্তু এখানে এসে বানরের উৎপাত দেখে অস্তির হয়ে উঠেছি। তবে, খারাপও লাগছেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পার্কে দেখার মতো রয়েছে বাঘ-সিংহ, কুমির, ভল্লুক, জলহস্তী, হাতি, লাম চিতা, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণসহ নানা প্রজাতির পাখি। পার্কের বেস্টনির পাশাপাশি উন্মুক্ত প্রাকৃতিক গাছগাছালির মাঝে রয়েছে বানর, খরগোশ, বন মোরগ ও সাপ।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বানর, বন মোরগ ও সাপ সম্প্রতি বংশ বিস্তর করেছে। অতিরিক্ত বেড়ে গেছে বানর ও বন মোরগ। এখন পুরো পার্ক জুড়েই বিচরণ এই দুই জাতের প্রাণীর। পর্যটক দেখলেই বন মোরগ গা-ঢাকা দিতে জঙ্গলে পালালেও বানর ছুটে আসে পর্যটকদের নিকটে। এসময় পর্যটকরাও বানরের বাদরামি উপভোগ করে মনের আনন্দে।
সাফারি পার্কের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পার্কের শুরুতে ৫০-৬০টা বানর ছিল। বংশ বিস্তার হতে হতে এখন ৩-৪ হাজারে উন্নিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বানরদের জন্য তেমন কোন খাবারের বরাদ্দ নেই। তারা প্রাকৃতিক খাওয়ার খেয়ে জীবন ধারন করে তাকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!