চকবাজারে ‘বড় ভাই’ গ্রুপের হামলায় আহতদেরই উল্টো মামলায় জড়ানো হল (ভিডিও)

আহতদের মামলা নেয়নি চকবাজার থানা

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের কথিত ‘বড় ভাই’য়ের গ্রুপে যোগ না দেওয়ায় একদল কিশোর দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি কোপে দুই কিশোর ছাত্র গুরুতর আহত হলেও চকবাজার থানা সেই ঘটনায় মামলা নেয়নি। উল্টো যাদের হাতে ওই দুই কিশোর আহত হয়েছেন, তাদেরই মামলায় জড়ানোর অভিযোগ মিলেছে।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) চট্টগ্রামের কলেজ রোডে কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজের সামনে এলোপাতাড়ি কোপানোর সেই ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই ভিডিওতে ওয়াহিদ, ঈশান, তারেকসহ আরও কয়েকজন মিলে কাজেম আলী স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলা করতে দেখা যায়।

এ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে আহত হন কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর জয় নূর এবং দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জামশেদ। পরে তারা মামলা করতে চাইলে চকবাজার থানা মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, একদল বহিরাগত কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজে গিয়ে প্রায় নিয়মিতই সেখানকার ছাত্রদের চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইরাকের হয়ে রাজনীতি করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তার হয়ে রাজনীতি না করলে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছিল সাধারণ ছাত্রদের।

অথচ একই ঘটনা গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) আহত জামশেদসহ আরও আটজনকে আসমি করে মামলা দায়ের করা হয় চকবাজার থানায়। প্রকাশ্য সড়কে এলোপাতাড়ি কোপানোয় অংশ নেওয়া তারেক বাদি হয়ে ওই মামলা করেন।

জানা গেছে, হামলাকারী ওয়াহিদ হাজী মহসিন কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং তারেক এমইএস কলেজের শিক্ষার্থী। তবে ঈশান লেখাপড়া করে না। এরা সবাই চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ইরাকের পক্ষে কাজ করে। জাহিদুল ইসলাম ইরাক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এদিকে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) সহিদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে অভিযোগ নিয়ে আসলে মামলা না নেওয়ার তো কোন কারণ নাই। আমার ঠিক জানা নাই। আপনি ওসি স্যারের সাথে কথা বলে দেখেন।’

চকবাজার থানার ওসি মোহাম্মদ ফেরদৌস জাহানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে ছুরিকাঘাতে আহত হওয়া জামশেদ অভিযোগে জানান, ‘আমরা ঘটনার দিন মামলা করতে গিয়েছিলাম থানায়। থানা থেকে মামলা নেওয়া হয়নি। এখন দেখতেছি ছুরি দিয়ে যারা আমাদের কুপিয়েছে তাদের মামলা নেওয়া হয়েছে।’

জামশেদ বলেন, ‘কলেজে বহিরাগতরা এসে চকবাজার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহেদের হয়ে রাজনীতি করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাদের হয়ে রাজনীতি না করায় আজ কলেজ থেকে বের হলে ওয়াহিদ ছুরি দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এক পর্যায়ে আমি আর কলেজে আসলে ঈশান আমাকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেন।

মামলায় ৫ নম্বর আসামি আরমান হোসেন চৌধুরীর দাবি, ‘ঘটনার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। মহসিন কলেজের ক্লাসে ছিলাম। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ঘটনাস্থলে‌ কারা কী করেছে, কারা উপস্থিত ছিল?’

তিনি বলেন, ‘মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক এই মামলায় যাদেরকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে অরবিন আহমেদ জামশেদ, আকমাম বাপ্পি, আবদুল্লাহ আল সাইদসহ অনেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।’

আরএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!