চকবাজারে নালার ওপর সোলায়মান শেঠের ভবন

রায়হান কমপ্লেক্সের মূল স্তম্ভের একটি রাস্তার ওপর

চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কমাতে নালা ও খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সেনাবাহিনীসহ চট্টগ্রামের প্রশাসন যখন কঠোর অবস্থানে, ঠিক তখনই চকবাজার ডাকঘরের উত্তর পাশে নালার ওপর সদর্পে গড়ে তোলা হয়েছে শেঠ প্রোপার্টিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। রাজনৈতিক আড়াল পেতে সেখানকার একটি ছোট কক্ষকে ব্যবহার করা হচ্ছে মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয় হিসেবেও। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাাধিকারী জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ।

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় আড়াই হাজার ফুট নালা, ফুটপাত নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। চকবাজার তেলিপট্টি থেকে প্যারেড কর্ণার, কাপাসগোলা থেকে অলিখাঁ মোড় পর্যন্ত চলমান এ কাজে নালার কিছু অংশ সংস্কার ও কিছু অংশ নতুনভাবে নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু চকবাজার ডাকঘরের উত্তর পাশে অবস্থিত শেঠ প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কার্যালয়ের জন্য বাধাগ্রস্থ হচ্ছে চলমান কাজ। আগে থেকে ওই ভবনের নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে নালাটি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীদের প্রশ্ন— নালার ওপর অফিস নাকি অফিসের নিচ দিয়ে নালা? যদি অফিসের জায়গায় হয়, তবে নালা বাইপাস করা হোক। আর নালার ওপর অফিস হলে অফিস উচ্ছেদ করা হোক।

চকবাজারে রায়হান কমপ্লেক্স ভবনের মূল স্তম্ভের একটি পড়েছে রাস্তার ওপর।
চকবাজারে রায়হান কমপ্লেক্স ভবনের মূল স্তম্ভের একটি পড়েছে রাস্তার ওপর। ছবি: আজীম অনন।

একই অবস্থা শেঠ প্রোপার্টিজের উত্তর পাশের রায়হান কমপ্লেক্সেরও। রায়হান কমপ্লেক্স সাত তলা ভবন। এই ভবনের মূল স্তম্ভের একটি রাস্তার ওপর। সিডিএর উচ্ছেদের সময় এই ভবনের ছাদ রেখে দুটি স্তম্ভের মাঝ দিয়ে নালা তৈরি করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীতে যতটুকু ফুটপাত থাকার কথা নেই তার অর্ধেকও। যতটুকু আছে তারও বিশাল একটা অংশ পার্শ্ববর্তী দোকান কিংবা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের দখলে। চকবাজার এলাকায় দখল-বেদখলে ফুটপাতে একেবারে গায়েব বলা চলে!

১/১১ সরকারের সময় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়ক প্রশস্ত করার সময় দুপাশের বেশ কিছু বেদখলে থাকা জায়গা উদ্ধার করে নালা তৈরি করেছিল। সেই নালার ওপর ছিল স্ল্যাব। নালার স্ল্যাবই ছিল ওই এলাকার লোকজনের নিরাপদে হাঁটার পথ, ফুটপাত! সম্প্রতি সিডিএ সেই নালাগুলো সংস্কারের কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)।

নালার ওপর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া স্ল্যাবগুলো পাশের দোকানদাররা এমনভাবে ব্যবহার করেছেন দেখে বোঝার উপায় নেই দোকানের অংশ নাকি পায়ে হাঁটার পথ। মোজাইক পাথর, ফুলের দোকান, ওয়ার্কশপ, গ্যাস সিলিন্ডার, মোটরসাইকেল মেরামতের যন্ত্রপাতি, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানদাররা যার যার মতো করে ব্যবহার করছেন ফুটপাত। দেখে মনে হবে দোকানের বর্ধিত অংশ।

চকবাজারে শেঠ প্রপার্টিজ— নালার ওপর অফিস নাকি অফিসের নিচ দিয়ে নালা?
চকবাজারে শেঠ প্রপার্টিজ— নালার ওপর অফিস নাকি অফিসের নিচ দিয়ে নালা?

শেঠ প্রোপার্টিজের পূর্বমূখী ওই কার্যালয়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নালাটি সুবসতি চক অর্কিড ভবনের সামনে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালে মিশেছে। ওই খালটি চট্টেশ্বরী সড়ক থেকে শুরু হয়ে গুলজার মোড় হয়ে লালচাঁন্দ সড়কের মন্দিরের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাক্তাই খালের ধনিরপুলের অংশে মিশেছে। খালের পুলটি অতিক্রম করলে স্টিলের আলমিরার কয়েকটি দোকান, তারপর চকবাজার ডাকঘর। স্টিলের আলমিরার দোকানিরা তাদের সরঞ্জাম রেখে দখলে রাখেন ফুটপাত। পোস্ট অফিস থেকে দক্ষিণ দিকে সড়কের একটা অংশজুড়ে থাকতো ইট-বালি ব্যবসায়ীদের দখলে। তবে নগর পুলিশের কঠোর অবস্থানের ফলে প্যারেড মাঠ সংলগ্ন সড়কে ইট-বালি ব্যবসা বন্ধ হয়েছে।

শেঠ প্রোপার্টিজ কার্যালয় ও রায়হান কমপ্লেক্সের নিচের নালা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নালার কাজ করতে গিয়ে আমরা শেঠ প্রোপার্টিজ ও রায়হান কমপ্লেক্স নিয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছি। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি, বিভাগ তা দেখবে।’

এ বিষয়ে শেঠ প্রোপার্টিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোলায়মান আলম শেঠ বলেন, ‘আমাদের এই ভবনটি আমরা ছেড়ে নতুন ভবনে যাওয়া পর্যন্ত সময় চেয়েছি। আমাদের অংশের নালা আমরা নিয়মিত পরিষ্কার রাখি। যাতে পানি আবদ্ধ না থাকে। আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। এজন্য বিপরীত পাশে প্রায় ৩০ ফুট জায়গা আমরা চলাচলের জন্য ছেড়ে ভবন নির্মাণ করেছি। এছাড়াও আশপাশের সড়কে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ আমরা শেঠ প্রোপার্টিজের খরচে করছি।’

উল্লেখ, এই ভবনটিতে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরানো হলে সেখানে শেঠ প্রোপার্টিজ লিমিটেড ও নগর জাতীয় পার্টির কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।

সড়কের ওপর রায়হান কমপ্লেক্সের গার্ডার সম্পর্কে জানতে চাইলে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, ২০০৮-২০০৯ সালে সিডিএর উচ্ছেদ কার্যক্রমের সময় ওই ভবনটির বর্ধিতাংশ ভাঙ্গতে চেয়েছিল সিডিএ। কিন্তু টোটাল স্ট্রাকচার কলাপস হওয়ার আশঙ্কায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছিল। তবে লোকজন চলাচলের জন্য নিচতলা ভাঙা হয়েছে।

এদিকে, খুব দ্রুত রায়হান কমপ্লেক্সের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সিডিএ সূত্রে জানা গেছে।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!