ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি

৫ শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত

বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’। শক্তি মত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে আবহাওয়াবিদরা একে বলছেন সুপার সাইক্লোন। এ অবস্থায় আম্পানের তাণ্ডব থেকে বাঁচতে সমুদ্রপাড়ের কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। আম্পানের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও রামু ১০ পদাতিক সেনানিবাস। এজন্য দিনব্যাপী কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার পৃথক পৃথক প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও প্রত্যেকটি ইউনিয়নে সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে পৃথক মেডিক্যাল টিম। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫ শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার। এছাড়া স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খোলা রেখে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আবহাওয়ার সতর্কবার্তা অনুসরণ করে মাছ ধরার সব ধরনের নৌযান উপকূলের কাছাকাছি অবস্থানে সাবধানে রয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এসব এলাকার মাছ ধরার নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে সামান্য গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও বেশিরভাগ এলাকায় প্রচণ্ড গরম অব্যাহত রয়েছে। সাগরের ঢেউগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হয়ে আছড়ে পড়ছে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বিপদ সংকেতের খবরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েক দফা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার উপকূলীয় এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে ৫৭৬টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ২৫টি মুজিব কিল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় নিতে পারবেন। একইসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেগুলোকেও পরিষ্কার করে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। কক্সবাজার শহরে থাকা চার শতাধিক হোটেল-মোটেলের বেশ কয়েকটি হোটেলকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য যানবাহনসহ সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্ভাব্য দুর্যোগ পরবর্তী তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তে ২৬৫ মেট্রিকটন জিআর চাল, এক লাখ ১৬ হাজার টাকা, ১২২ বান্ডেল ঢেউটিন ও ৫০০ তাবু রয়েছে। অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি দুটি উপজেলায় প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য উদ্ধার ও ত্রাণকার্য পরিবীক্ষণের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এলাকায় থেকে সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় যথাযথ দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি ও সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য স্থানীয় আবহাওয়া দফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা ও উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৮টি রেপিড রেসপন্স টিমসহ ৮৮টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইভাবে জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।

আম্পান মোকাবিলায় প্রস্তুতির বিষয়ে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের পর মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার পৌরসভা সম্মেলন কক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। সভায় চিড়া, মুড়িসহ পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের ব্যবস্থাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালেক বলেন, সাগর থেকে বেশিরভাগ মাছ ধরার ট্রলার ফিরে এসেছে। এরপরেও এখনও অনেক ট্রলার ফিরে আসেনি। ইতোমধ্যে যেসব বোট ও ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে সেগুলোকে নিরাপদে রাখা হয়েছে।

প্রস্তুতির বিষয়ে রামু সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বার্তায় জানানো হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আজও সারাদিন এই বিষয়ে ক্যাম্পগুলোতে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জনপ্রতিনিধিরা।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!