লঙ্কাকাণ্ড/ ‘ঘুষে’ চলা কাভার্ডভ্যান পুলিশ কমিশনারের সামনে, অতঃপর…

ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অবৈধ ও ফিটনেসহীন যানবাহন চলাচলের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো এবং ‌‘ওপেন সিক্রেট’। তবে এবার অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে নিষিদ্ধ সময়ে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান চলাচল করার সুযোগ দিতে গিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। কেননা কাভার্ড ভ্যানটি পড়েছে স্বয়ং সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমানের সামনেই! আর এতেই যত বিপত্তি ও গণ্ডগোল!

রীতিমত বোমা ফাটালেন সেই কাভার্ড ভ্যানচালকও! তিনি দাবি করেছেন, মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে নিষিদ্ধ সময়েও সুযোগ পেয়েছেন দিনের বেলায় গাড়ি চালানোর। এই এক কথাতেই নড়েচড়ে উঠে পুরো সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সর্বশেষ সেই ট্রাফিক কনেস্টেবল রিয়াজকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নেওয়ার পথে হাঁটছে সিএমপি।

জানা গেছে, বুধবার (৭ আগস্ট) সকাল ১০টার পর চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদের বাসা থেকে দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের নিজ কার্যালয়ে আসছিলেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান। মুরাদপুর ফ্লাইওভারের জিইসি লুপ ক্রস করতেই তার চোখে পড়ে একটি কাভার্ড ভ্যান তাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে। এমন কাণ্ডে রীতিমত বিস্মিত খোদ পুলিশ কমিশনারও! কেননা তিনিই জনস্বার্থে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নিয়ম করে দিয়েছিলেন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সকাল ৮টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত নগরীতে চলতে পারবে না। এখন নিজ চোখেই দেখলেন নিয়ম ভেঙেই চলছে একটি কাভার্ড ভ্যান।

নগরজুড়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে হরহামেশাই
নগরজুড়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে হরহামেশাই

এ ঘটনা দেখে সাথে সাথেই পুলিশ কমিশনার গাড়ি থামিয়ে প্রটোকলে থাকা অফিসারকে নির্দেশ দিলেন নিষিদ্ধ সময়ে কাভার্ডভ্যান চলার রহস্য উদঘাটনের। ওই অফিসার কাভার্ড ভ্যানচালককে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, এক ট্রাফিক কনস্টেবল ৫০০ টাকা নিয়ে দিনের বেলায়ও তাকে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি নগরীর মধ্যে কোনও ট্রাফিক পুলিশ তাকে আটক করলে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের টিআই (এডমিন) মহিউদ্দিনের রেফারেন্স দিলে অবাধে যাতায়াতের সুযোগ পাবে বলেও আত্মবিশ্বাসের সাথে জানান ওই চালক।

এসব কথা পুলিশ কমিশনারকে জানালে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ডিসি ট্রাফিক (উত্তর) হারুন অর রশীদ হাযারীর কাছে বিস্তারিত জানতে চান। তখন টিআই মহিউদ্দিন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় দাবি করে ওই কনস্টেবলের সঙ্গে তার পরিচয় নেই বলেও জানান। এরই মাঝে বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে হাজির ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা।

পরে হাজির করা হয় ওই সময়ে উত্তর বিভাগের ওই সড়কে কর্মরত সব ট্রাফিক কনেস্টেবলকে। কাভার্ড ভ্যানচালক এদের মধ্যে বহদ্দারহাটে দায়িত্বরত রিয়াজ নামে এক ট্রাফিক কন্সটেবলকে চিহ্নিত করেন টাকা আদায়কারী হিসেবে। পরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে জানালে তিনি অভিযুক্ত কনস্টেবলকে সঙ্গে সঙ্গেই বরখাস্তের জন্য ডিসি ট্রাফিককে নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রসেসিং শুরুরও আদেশ দেন সিএমপি কমিশনার।

সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘জিইসিতে দিনের বেলায় চলাচলের কারণে একটা কাভার্ড ভ্যানকে জব্দ করেছি। চালককেও আটক করেছি। এর বাইরে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে বহদ্দারহাটে দায়িত্বরত রিয়াজ নামে এক পুলিশ কনেস্টেবলকে ডিসি স্যার বরখাস্ত করেছেন।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!