ঘুমন্ত যুবককে ঢাকায় মেরে চট্টগ্রামে ঘুরছিলেন লরিচালক

রাজধানীর ফুটপাতে ২০ বছর বয়সী এক ঘুমন্ত যুবককে চাপা দিয়ে হত্যা করে ১১ মাস ধরে চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে ঘুরেছেন লরিচালক মো. আল আমিন। এরপরও নিয়মিতই চালিয়ে আসছিলেন বড় কাভার্ড ভ্যানও। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনেও এতটুকু উদ্বেগ ছিল না এই ঘাতক চালকের।

বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে রাজধানীর বাংলামোটরের ফুটপাতে ঘুমন্ত যুবককে চাপা দিয়ে হত্যার ঘটনার পর থেকে ট্রাক ও লরিটি আটক থাকলেও এর চালককে শনাক্ত করতে পারছিল না পুলিশ। ঘটনার পর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে দুইবার।

শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ম্যানশন ডিপো থেকে আল আমিনকে (২৫) গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আল মোমেন।

পুলিশের ভাষ্য, বেপরোয়া গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। আল আমিন মাঝেমধ্যেই গভীর রাতে চট্টগ্রাম থেকে পাথর বোঝাই লরি চালিয়ে ঢাকার সাভারে পৌঁছে দিতেন। ঘটনার রাতে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত ছিলেন তিনি।

গ্রেপ্তারের পর লরিচালক আল আমিন পুলিশকে জানান, একটি রিকশাকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে তার লরিটি। ঘটনার পর এক মুহূর্তও দেরি না করে তিনি সোজা চট্টগ্রামে চলে আসেন। আল আমিনের গ্রামের বাড়ি খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি থানার মাস্টারপাড়ায়। তবে পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে।

২০২০ সালের ১৩ মার্চ রাত ৩টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে বেপরোয়া গতির একটি লরি (চট্ট-মেট্রো ঢ-৮১-১১২৭) ও একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ড-৬৭৪৭) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ফুটপাতে উঠে পড়ে। এ সময় ফুটপাতে এক যুবক ঘুমাচ্ছিলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ির চাপায় গুরুতর জখম হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

ঘটনার দিনই পুলিশের এসআই রিপন মিয়া বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৯৮/১০৫ ধারায় মামলা করেন। তবে নিহত যুবকের কোনো পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তার কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েও পরিচয় শনাক্তে ব্যর্থ হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আল মোমেন বলেন, ‘ঢাকায় গাড়িচাপা দিয়ে লোক মারার পরও আল আমিন চট্টগ্রামে নিয়মিত গাড়ি চালাত। গ্রেপ্তারের পর সে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। সে জানিয়েছে, এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হবে বলে তার ধারণাই ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, মামলাটির কোনো কূলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজও অস্পষ্ট ছিল। তবে প্রযুক্তির সহায়তায় লরিটির মালিক ও চালককে শনাক্ত করা হয়। ট্রাকটির কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। ফলে এখনও মালিক চিহ্নিত করা যায়নি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নাভানা জহির স্কয়ার মার্কেটের নিরাপত্তা প্রহরী শংকর দাশ ও রিয়াজ উদ্দিন জানান, ঘটনার রাতে একটি পাটের চটের ওপর কালো স্টাইপের শার্ট পরে ঘুমাচ্ছিলেন আনুমানিক ২০ বছর বয়সী এক ভবঘুরে। এ সময় দ্রুতগতির দুটি গাড়ি শাহবাগ থেকে বাংলামোটর আসার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে তুলে দিলে বিকট শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখেন ঘুমন্ত ওই যুবকের পুরো শার্ট রক্তে ভিজে আছে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাই। প্রতি রাতেই ওই যুবক ফুটপাতে ঘুমাত। তার পরিচয় সম্পর্কে জানা নেই।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!