ঘিঞ্জি ঘরের নকল ‘চিপস’ যেভাবে ঢোকে চট্টগ্রামের দোকানে দোকানে

নোংরা পরিবেশে আটা-ময়দা ও রঙের সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হচ্ছিল শিশুদের লোভনীয় পণ্য চিপস— যার পুরোটাই নকল। চট্টগ্রামের আনোয়ারার ঘিঞ্জি ঘরে বানানো এসব নকল চিপস ট্রাকে করে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী-হালিশহরের এক গোডাউনে। সেখান থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় চিপসগুলো সরবরাহ করা হয়। এ ধরনের চিপস খেয়ে শিশুদের অনেক বড় ক্ষতিও হতে পারে— এমন অভিমত শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

জানা গেছে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের হাজীগাঁও পশ্চিম শোলকাটা ভগগন শাহ্ মাজারের পাশে সাইনবোর্ডবিহীন নকল চিপসের কারখানায় তৈরি হচ্ছে চিপস, ডাল ভাজা, চানাচুরসহ বিভিন্ন পণ্য। যেখানে যারা কাজে নিয়োজিত— তাদের সবাই শিশু ও নারী শ্রমিক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার ব্যস্ততম শাহ্ মোহছেন আউলিয়া হাজীগাঁও সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে চিপস তৈরির এই কারখানা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে লাইসেন্সবিহীন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে আটা, ময়দা, রং এবং বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হয় নকল চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। কারখানার ভেতরে শিশু ও নারী শ্রমিকরা অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্যাকিংয়ের কাজ করেন। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন রঙের পাত্র, সোডা, ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক অ্যামোনিয়াজাতীয় পদার্থ। শ্রমিকরা খালি গায়ে ঘাম ঝরানো শরীরে কাজ করছেন। এখানে বাহারি রকমের নামিদামি কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে শিশু ও নারীদের দিয়ে তৈরি হচ্ছে চিপস, ডাল, মটরভাজা ও চানাচুরসহ শিশুদের লোভনীয় খাবার পণ্য।

জানা গেছে, এসব পণ্য পাহাড়তলী হালিশহরের মো. আবদুল্লাহ্ আল মাসুদ নামে এক ব্যক্তির মেসার্স রাহা এন্টারপ্রাইজের ঠিকানায় ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাতে বা দিনে। তবে এ ব্যাপারে কারখানার মালিক বা শ্রমিক কারও সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলছেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব চিপস খেলে শিশুদের নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে টিনশেডের একটি ঘরে গড়ে তুলেছেন চিপস তৈরির কারখানা। অবৈধ এ চিপস তৈরির কারখানা প্রশাসন দেখেও যেন কিছু দেখছে না। এ পর্যন্ত কোনো আইনি ব্যবস্থাও নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে মেসার্স রাহা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর আবদুল্লাহ্ আল মাসুদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ডিলার। আনোয়ারা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে চিপস নিয়ে ব্যবসা করছি। আনোয়ারায় যারা করছে তাদেরও অনুমোদন আছে। সাইনবোর্ডবিহীন চিপস কারখানায় মালিক পরিচয়ে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি মাসুদের ফোন থেকে হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের কী আছে কী নেই— সবই কি আপনাকে বলতে হবে? আপনার কিছু লাগলে এখানে এসে যোগাযোগ করেন। আমি স্থানীয় নেতা।’

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আনোয়ারা উপজেলা শাখার সভাপতি জাহেদুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু জাহিদ মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘নকল তৈরি চিপস শিশুরা খেলে লিভার, কিডনিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। একটি কারখানা স্থাপন করতে প্রিমিসেস লাইসেন্স, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। এ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে কারখানা স্থাপন করতে পারবে না।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘এসব চিপস কোথায় তৈরি হচ্ছে, কে তৈরি করছে— এসব আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!