ঘাট ফিরিয়ে দিতে সিটি কর্পোরেশনকে এক সপ্তাহ সময় দিল ক্ষুব্ধ মাঝিরা

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ থাকার পরও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মাঝিদের ঘাট ইাজারা না দেওয়ায় কর্ণফুলী নদীতে শত শত সাম্পান নিয়ে দিনব্যাপী অনশন করছে আটটি মাঝিদের সংগঠন।

মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাটে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই অনশন কর্মসূচি পালন করে মাঝিরা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঘাটটি মাঝিদের ফিরিয়ে না দিলে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এতে বক্তারা বলেন, আড়াই হাজর বছর আগের সাম্পান ও সাম্পান মাঝি চট্টগ্রামের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি শফিক আহমদকে বাংলাবাজার ঘাট ও ব্যবসায়ীদের ১১ ও ১৪ নম্বর ঘাট ইজারা দিয়ে মাঝিদের ঘাটছাড়া করাটা কিছুতেই মেনে নিবে না চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি ঘাটটি মাঝিদের ফিরিয়ে না দেয় তাহলে সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও করা হবে।

অনশন কর্মসূচিতে মাঝিদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, হাসান ফেরদৌস, কর্ণফুলী গবেষক প্রফেসর ড. ইদ্রিচ আলী, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলী, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাংলাবাজার সাম্পান মাঝি কল্যাণ সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান দয়াল, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউছুপ, অর্থ সম্পাদক জসীম উদ্দিন, সদরঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সহ সভাপতি নাজির আলী, সাধারণ সম্পাদক নূর আহমদ, ইছানগর সদরঘাট সাম্পান সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, অর্থ সম্পাদক ফরিদ আহমদ, কর্ণফুলী ফিশিং জাহাজ যাত্রী পারাপার সাম্পান সমিতির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট সাম্পান সমিতির সভাপতি আবদুর শুক্কুর, ১৪ নম্বর গুচ্ছগ্রাম সাম্পান সমিতির মোহাম্মদ করিম ও মনির আহমদ প্রমুখ।

জানা গেছে, গত ১ বৈশাখ পেশাগত সাম্পান মাঝি (পাটনিজীবি) থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে পাটনিজীবি নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ইজারা দেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম। ঘাটহারা মাঝিরা অনিয়মের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৯ এপ্রিল স্থানীয় সরকার সরকার বিভাগ প্রশাসন-২ শাখা কর্তৃক পাঠানো পত্রে উপ-সচিব মোহাম্মদ ফজলে আজিম পেশাদার জন্মগত পাটনিজীবি সমিতিকে ঘাট ইজারা দেওয়ার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঘাট মাঝিদের ইজারা দেওয়ার অনুরোধ জানালেও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এই বিষয়ে পুনঃরায় আইনি মতামতের জন্য নির্দেশনাটি চসিক আইন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেন। এরপর বিগত ছয় মাসেও মাঝিদের ঘাট ফিরিয়ে দেয়নি চসিক। করোনার কারণে সাম্পান মাঝিরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। তার উপর নিজেদের ঘাট হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে হাজারো সাম্পান মাঝি। অনেকে বাপ-দাদা তিনপুরুষের এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কর্ণফুলী থেকে সাম্পান চিরতরে হারিয়ে যাবে বলে জানান মাঝিদের আন্দোলনের সহযাত্রী চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান আলীউর রহমান।

তিনি বলেন, চসিক মাঝি থেকে ঘাট কেড়ে নিয়ে চট্টগ্রামের কৃষ্টি সংস্কৃতির পরিপন্থী কাজ করছে। যা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

আন্দোলনের আহ্বায়ক কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলী বলেন, ২০০৩ সালের পাটনিজীবি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে মাঝিদের ঘাটছাড়া করেছে চসিক। আামদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দিনব্যাপী অনশনের করতে হচ্ছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!