ঘর পেয়ে ভূমিহীন চট্টগ্রামের রহিমা প্রধানমন্ত্রীর জন্য বুনলেন নকশীকাঁথা

'ফ্লাইং কিস' ছুড়ে অভিবাদন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ঘরে বসে তাঁর জন্য নকশীকাঁথা সেলাই করেছেন আনোয়ারার ভূমিহীন নারী রহিমা খাতুন।

সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীকে সেই নকশীকাঁথা দেখিয়ে রহিমা খাতুন বলেছেন, ‘আপনার দেওয়া ঘরে বসে আপনার জন্য দুটা নকশীকাঁথা বানিয়েছি। এই দুটো কাঁথা আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই আমার কাছ থেকে নিতে হবে।’

এ সময় ওই প্রান্ত থেকে ‘ফ্লাইং কিস’ ছুড়ে দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। একই সাথে রহিমার সেলাই করা দুটো কাঁথা নিতে সম্মতিও জানান প্রধানমন্ত্রী।

ভূমিহীন নারী রহিমা খাতুনের বয়স ৪৫ বছর। ৪ মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা রহিমা খাতুন বাচ্চাদের আরবী শিক্ষা দেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আরও ১৭০ ভূমিহীন পরিবারের সাথে ঘর পেয়েছেন রহিমা বেগমও।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের এসব ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের আনোয়ারার বারখাইন ইউনিয়নের হাজিগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরাসরি গণভবন থেকে যুক্ত হন। এসময় উপকারভোগী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন রহিমা বেগম।

রহিমা বেগম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ভূমি ছিল না। ৪ মেয়ে নিয়ে মানুষের ঘরে ভাড়া থাকতাম। আপনার চেষ্টায় আমি ঘরও পেয়েছি, ভূমিও পেয়েছি। সুন্দর একটা বিল্ডিং, যার এক পাশে সাগর, এক পাশে পাহাড়। যেন ফাইভ স্টার হোটেল।’

নিজের দিন পরিবর্তনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রহিমা বেগম বলেন, ‘এখানে আরও প্রায় ৪০ পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন আপনি। আমি তাদের বাচ্চাদের আরবী পড়াই। আমার এই মেয়ে (পাশে থাকা মেয়েকে দেখিয়ে) আনোয়ারা সরকারি কলেজে পড়ে। সে বাচ্চাদের বাংলা, অংক, ইংরেজি শেখায়। মোটামুটি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা কামাই করি আমরা। সে টাকা দিয়ে একটা ফ্রিজ কিনেছি। আপনাকে প্রতিদিন দেখতে পারি মত করে একটা টিভিও কিনেছি। একটা খাট কিনেছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ঘর পেলে মানুষ সব কিছু পেয়ে যায়। একটা ঘর পেয়ে মানুষ যখন হাসে তখন বেশি ভালো লাগে, জাতির পিতা এটাই তো চেয়েছিলেন।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ।’

আসন্ন ঈদের আগে তৃতীয় ধাপে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ঘর পেয়েছে আরও ১৩০ গৃহ ও ভূমিহীন পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকার উপকারভোগীদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাকি যে ঘরগুলো আছে সেগুলো আসতে আসতে তৈরি করে সব মানুষ যেন মানুষের মতো বাঁচতে পারে, সুন্দর জীবন পেতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আনোয়ারা উপজেলা প্রশাসন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের আনোয়ারা, সিরাজগঞ্জ, বরগুনাসহ চারটি স্থানের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর উপকারভোগীদের মাঝে ভার্চুয়ালি হস্তান্তর করেন।

আনোয়ারায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মুমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, চন্দনাইশ ও (সাতকানিয়া আংশিক) সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, বাঁশখালী সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমদ, উপজেলা ভূমি সহকারি কমিশনার তানভীর হাসান চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবয়ন কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম, সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় ভিডিও কনফারেন্সে রহিমা খাতুন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন ইয়ার মোহাম্মদ (৫৮)।

উপকারভোগী বিধবা শারমিন আকতার জানান, দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে ভূগছেন বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। সম্পর্ক করে বিয়ে করায় হারাতে হয় বাপের ভিটা মাটিও। এরমধ্যে তার স্বামীর শরীরে জটিল রোগ বেঁধে গত আঠারো দিন আগে মারা যান স্বামী। তাদের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে পড়েন বিপাকে। তিনিও পেয়েছেন একটি ঘর। কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনকে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে।’

মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে শেখ হাসিনার সরকার ‘ঘর নাই বাড়ি নাই’ এমন পরিবারগুলোকে জমিসহ গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় নতুন করে আরও ১৩০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুই শতক জমির উপর প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ হবে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

এআরটি/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!