ঘরে ফেরা মানুষের গল্প

চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম
প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মরত মানুষেরা নাড়ির টানে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ী ছুটে আসেন। বহুলোক একত্রে শহর ছাড়ে বলে স্বাভাবিকভাবে রেল, বাস, নৌযান গুলোতে চাপ বাড়ে। এই অনেকগুলো মানুষের বাড়ি ফেরার সময়টাকে এক শ্রেনীর পরিবহন ব্যাবসায়ী,কর্মচারীরা দুর্নীতির প্রতিযোগিতায় নামে।

 

ট্রেনের টিকিটগুলো বরাবরের মতই কালোবাজারীদের হাতে চলে যায়। লেপ,কম্বল নিয়ে ষ্টেশনে রাত যাপন করেও সোনার হরিণ টিকিটের দেখা পায়না। এর মাঝে রেলমন্ত্রী, সেতু মন্ত্রী বরাবরের মত আশার বাণী ছুঁড়ে দেন জনগনের উদ্যেশ্যে, কালোবাজারীর হাতে টিকিট যাবেনা, টিকিটটের দাম বাড়তি নিতে দেয়া হবেনা।

d188cb0efc90b9a2480750d26c2b0e47-5

পরিবহন মালিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ বৈঠকের পর বিবৃতি দেন বাড়তি বাড়া নিতে দেয়া হবেনা। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা যায় ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ গুলোর কষ্টের শেষ থাকেনা। তাদের কষ্টের দৈর্ঘ্য বাড়তেই থাকে অসাধু কর্মচারীদের দৌরাত্বে সাধারণ জনগন অসহায় হয়ে যায়। এবারের ঈদে  অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ঢাকা চট্রগ্রাম রুটে একজোড়া নতুন বিরতীহীন অন্তনগর ট্রেন চালু হবে।

 

সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন চলবে চাঁদপুর ,পার্বতীপুর,খুলনা রুটে নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ এতে মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। বাড়ি ফেরার জন্য মনুষগুলো ষ্টেশনে নির্ঘুম রাত পার করে অনেক কষ্টের ধকল সয়ে বাড়ি ফেরেন। উন্নত বিশ্বে কোন উৎসব উপলক্ষে যে কোন জিনিষের উপর ছাড় দিয়ে থাকে আর আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো কোন উৎসবে ব্যাবস্য়ীরা মুখিয়ে থাকেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জনগনের পকেট কাটার জন্য।

 

পুরাতন  যান্ত্রিক ত্রুুটি যুক্ত গাড়ি,ষ্টীমারগুলোকে রং করে যাত্রী বহনের জন্য নামিয়ে দেয়া হয় ফলে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠার আকুলতায় ব্যাকুল ঘরে ফেরা মানুষগুলো লাশ হয়ে ঘরে ফিরে। নৌপরিবহনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার বড় কারণ যান্ত্রিক ত্রুুটি সাথে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই। ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুন, তিনগুন যাত্রী বহনের ফলে সপ্নচোখা মানুষগুলোর নির্মম সলিল সমাধি হয়। কোন নৌ দুর্ঘটনা হলে দেখা যায় দুর্ঘটনাকবলিত নৌযানের  কাগজপত্র ঠিক নেই অথচ দিব্যি চলছে।

 

ঈদের সময় যত্রতত্র ভাসমান হকারের ফলে রাস্তা গুলোতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় ফলে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চলতে না পারা কারণে দুরপাল্লার বাসগুলো শহরে প্রবেশ ও বাহির হতে সময় লেগে যায় ফলে তাদের সিডিউল ঠিক রাখতে পারেনা আর তাতে ঘরে ফেরা মানুষগুলোর কষ্টের বোঝা দীর্ঘ হয়। কোন দুর্ঘটনার পর সারাদেশে হৈচৈ পড়ে যায়,কড়াকড়ি আরোপ  হয় সব বিছুর উপর কিছুদিন পর আবারো সব এলোমেলো হযে যায়। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে যে কোন মুল্যে এবং চাহিদা মত বগি মজুদ ও ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখতে হবে। শহরের রাস্তাগুলো যতদুর সম্ভব হকারমুক্ত রেখে গাড়ির স্বাভাবিক গতি ঠিক রাখলে দুর পাল্লার গাড়ি গুলোর সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনা।

 

নৌযান গুলোতে দিগুন ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই বন্ধ করে ঘরে ফেরা মানুষের জীবন নিরাপদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ষ্টেশন গুলোতে সার্বক্ষনিক পুলিশ টহলের মাধ্যমে যাত্রী সেবা নিশ্চি করে দুর্নীতিবাজদের তাৎক্ষনিক বিচারের মাধ্যমে জেল, জরিমানা আদায় করলে এসব অন্যায় কমে আসবে।

 

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা যেন উপভোগ্য ও সহজ হয় সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। প্রতি বছর একই কষ্টচিত্র কারো কাম্য নয় । ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নিরাপদ ও ঝামেলাবিহীন সবার কাম্য । সময়উপযোগী পদক্ষেপ  দুর্ঘটনা ও কালোবাজারী দুটোই বন্ধ রোধ করতে পারে আর তাতে  মানুষের ঘরে ফেরার যাত্রা হয় সুখকর।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!