‘ঘরের মাঠে’ ঢাকাকে জেতাল তামিমের ঝোড়ো সেঞ্চুরি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ডটবাবা’ বলে ব্যঙ্গ করা তামিম ইকবাল এবারের বিপিএলে নিজেকে ‘শটবাবা’ হিসেবে প্রমাণ করে আসছেন প্রথম ম্যাচ থেকে। ঢাকার মাঠে প্রথম দুই ম্যাচে ফিফটির দেখা পাওয়ার পর পরের দু ম্যাচে রানের দেখা পাননি চাটগাঁর দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এবার ঝোড়ো সেঞ্চুরি দিয়ে ঢাকাকে আবারও জয়ে ফেরালেন লোকাল হিরো তামিম ইকবাল।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইটের আলোয় তামিম দেখালেন টি-টোয়েন্টির আসল রূপ। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জয়ের ধারায় ফেরালেন নিজের দল মিনিস্টার ঢাকাকে। সঙ্গে আক্ষেপ বাড়ালেন সমর্থক আর বোর্ডের। এই তামিম অন্তত ৬ মাস টি-টোয়েন্টি খেলবেন না, এটি যে মেনে নেওয়া সহজ নয় মোটেও!

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেট সানরাইজার্সের মুখোমুখি হয় ঢাকা। এ ম্যাচে আগে ব্যাট করা সিলেট লেন্ডন সিমন্সের শতকের উপর ভর করে স্কোর বোর্ডে তোলে ১৭৫ রান। লক্ষ্য টপকাতে নেমে শুরু থেকে আগ্রাসী তামিম। বিপিএলের চলতি মৌসুম তো বটেই, টুর্নামেন্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিমকে টপকে সেরার মুকুট তুলেছেন মাথায়। তামিমের শতকের কল্যাণে সিলেটকে ৯ উইকেটে হারিয়েছে ঢাকা। এতে টুর্নামেন্টে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল ঢাকা।

এদিন সিলেটের দেওয়া ১৭৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামার ঢাকার ওপেনিং জুটি দেখে মনেই হয়নি আগের ৪ ম্যাচের ৩টি হেরেছে তারা। তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভার থেকে ৭ রান নেন দুই ওপেনার তামিম ও শাহজাদ। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে তুলে নিলেন ১২, ১৫, ১২, ১৫ করে। এতে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ঢাকার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৪ রান। ফিফটির দেখা পান তামিম। পঞ্চাশ রানের কোটা ছুতে খেলেন ২৮ বল।

দলীয় ৯ ওভারে ওপেনিং পার্টনারশিপে ১০০ রান যোগ করেন দু’জন। সে জুটি গিয়ে ভেঙেছে একেবারে শেষে, যখন জয় থেকে কেবল একটা শটের দূরত্বে ঢাকা। তামিমের পর সিলেটের বোলারদের শাসন করে ফিফটি তুলে নেন শাহজাদ। ফিফটি ছুঁয়েছেন ৩৪ বলে।

নিজের ফিফটির পর তামিমের আরো বিধ্বংসী রূপের দেখা পায় সিলেট। পরে ৬১ বলে ছুঁয়েছেন তিন অঙ্ক। ১৬ চার ও ৩ ছয়ে নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এই বাঁহাতি ওপেনার। পরে শাহজাদ ৩৯ বলে ৫৩ রান করে আউট হন আলাউদ্দিন বাবুর বলে। যেখানে ৭টি চারের সঙ্গে ছক্কা মারে ১টি। পরে জয়ের জন্য ৩ রান বাকি থাকলে সেই আনুষ্ঠানিকতা সারেন তামিম। ৬৪ বলে ১৭টি চার ও ৪টি ছয়ের সাহায্যে ১১১ রান তুলে অপরাজিত থাকেন তিনি। এতে ৯ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ঢাকা। হাতে থাকে ১৮ বল।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা সিলেট উদ্বোধনী জুটিতে ভালো শুরু পায়। এনামুল হক বিজয় আর সিমন্স গড়েন ৫০ রানের পার্টনারশিপ। পেসার এবাদত হোসেনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিজয় ১৬ বলে ১৮ রান করে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। মিঠুন ও কলিন ইনগ্রাম সুবিধা করতে পারেননি। মিঠুন ৮ বলে ৬ রান করে ফেরেন কাইস আহমেদের গুগলিতে পরাস্থ হয়ে। কলিন ইনগ্রামকে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে রানের খাতা খুলতে দেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা।

এতে ১৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে খানিক বিপদে পড়ে সিলেট। তবে একপ্রান্ত আগলে খেলে দলের রানের চাকা সচল রাখেন সিমন্স। চতুর্থ উইকেটে রবি বোপারার সঙ্গে গড়েন ৬৩ রানের পার্টনারশিপ। এক ফাঁকে অর্ধশতক তুলে নেন সিমন্স। মাত্র ৩৪ বলে ফিফটি হাঁকান তিনি। তবে বোপারা সুবিধা করতে পারেননি। রান আউট হন ১৪ রান করে। ১৫ বলে বাউন্ডারি নেই তার।

সিমন্স অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পর পূর্ণ করেন টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের দ্বিতীয় শতক। ৫৯ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। যা এবারের বিপিএলে কোন ব্যাটসম্যানের প্রথম শতক। তিন অঙ্ক ছুঁয়ে সিমন্স যেন আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। ১৯তম ওভারে তামিম ইকবালের হাতে বন্দী হওয়ার আগে আন্দ্রে রাসেলকে হাঁকান টানা ২টি চার ও ১ ছক্কা। বিদায়ের আগে ৬৫ বলে ১১৬ রান করতে ১৪টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন।

মূলত সিমন্সের ব্যাটে চেপেই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে সিলেটের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭৫ রান। ৮ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ঢাকার পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন মাশরাফি বিন মুর্তজা, আন্দ্রে রাসেল, এবাদত হোসেন চৌধুরী ও কাইস আহমেদ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!