ঘরের চালে দুটো টিন বদলেই চাকরিহারা আমিন জুটমিলের শ্রমিক

ঘরের চালের কেবল দুটি টিন বদলেই চাকরি হারালেন আমিন জুটমিলের শ্রমিক। চাকুরিচ্যুত অস্থায়ী শ্রমিক কামাল উদ্দীন আমিন জুট মিলস লিমিটেডের তাঁত বিভাগে হেলপার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি জুট মিলের শ্রমিক হাজিরা কর্মচারী সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক।

উল্লেখ্য, সংগঠনটি এটি অস্থায়ী বা বদলি শ্রমিকদের সংগঠন। কামাল ২০০৯ সালে ১ আগস্ট বদলি শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান। গত ১৭ আগস্ট আমিন জুট মিলের শ্রম দপ্তর থেকে ইস্যুকৃত এক আদেশে কামালের বদলি কার্ড স্থগিত করা হয়।

ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, মিল মালিকানাধীন জায়গায় ঘর সংস্কার করার অপরাধে কামালের বদলি কার্ড স্থগিত করা হয়েছে।

ঘর সংস্কারের বিষয়ে কামাল উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার নামে বরাদ্দকৃত ঘরের টিন ফুটো হয়ে ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। তাই শুধুমাত্র দুটি টিন বদল করেছি। অবকাঠামোগত ঘরের নিচে মাটি, উপরে টিন, পাশে বেড়াই আছে।’

আমিন জুট মিলস লিমিটেডের সিবিএ সভাপতি আরিফুল হক বলেন, ‘কামালের বদলি কার্ড স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আমরা কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করেছি। আশা করছি এটি সমাধান হয়ে যাবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে সংস্কার করা ছাড়া বসবাসতো করাই যায় না। যার নামে যা কিছু বরাদ্দ তা তিনি সংস্কার করবেনই। এমন হলেতো কারোরই চাকরি থাকবে না। এ ধরনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। কামালের ক্ষেত্রে তার কোনটিই হয়নি।’

আমিন জুট মিলস লিমিটেডের উপ-প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘মোবাইলে এত কথা বলা যাবে না। আপনারা অফিসে আসুন। অফিসে সামনাসামনি কথা বললে বিষয়টি বুঝতে পারবেন।’

আমিন জুট মিলস লিমিটেডের প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘চাকরির শর্তানুযায়ী কেউ যদি তার নামে বরাদ্দকৃত ঘরের কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে হয় পূর্বানুমতি নিতে হয়। কিন্তু কামাল বরাদ্দের বাহিরে জায়গা দখল করে ঘর তৈরি করেছে। চাকরি শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে তার কার্ড স্থগিত করা হয়েছে।’

কোন তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে কামরুল হাসান জানান, ‘তদন্ত কমিটি হয়নি। নিরাপত্তা শাখার ডেপুটি চিফ অফিসার সাহেব নিজেই দেখেছেন। তারপর এই নোটিশ জারি হয়।’

এদিকে, পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অপরাধে কামালকে চাকরিচ্যুত করেছে বলে আমিন জুট মিলস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক।

শ্রমিক আন্দোলনে কামালের ভূমিকায় কর্তৃপক্ষ তার প্রতি রুষ্ঠ হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘শ্রমিকরা কিছু একটা বাড়তি পেলে আমাদেরতো কোন ক্ষতি নেই। তাদের আন্দোলন নিয়ে আমরা কেন রুষ্ঠ হবো? শ্রম আইন অনুযায়ী তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারে। আন্দোলন করা শ্রমিকদের অধিকার। তাদের যৌক্তিক দাবির সাথে আমরা সবসময় একমত থাকি।’

অনেক শ্রমিক জমি দখল করে ভবনও তৈরি করেছে কিন্তু শাস্তি শুধু কামালকে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কেউ তা করতে পারেনি। আগে যারা করেছে তাদের ব্যাপারে ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!