এহসান আল-কুতুবী : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের (পিডিবি) কঠোর সমালোচনা করেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ।
তিনি বলেন , গ্রাহকরা ফোন দিলে কর্মকর্তারা ধরেন না। ধরে পিয়ন। গ্রাহক যদি জিজ্ঞেস করে, উনি (কর্মকর্তা) কই। পিয়ন বলে, আছেন। কিন্তু তবুও তিনি ফোন ধরেন না। যাদের টাকা থেকে আপনারা বেতন পান তাদের সঙ্গেই আপনাদের এমন আচরণ কেন?
শুক্রবার (২৬ মে ) আগ্রাবাদে বিদ্যুৎ ভবনে চারটি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন করতে আসলে এ কথা বলেন ।
পিডিবি কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, তিনবছরের মধ্যে সবখানে প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম চালু করার জন্য বলা হয়েছিল। গত তিনবছর ধরে আপনাদের তা বলে আসছি। কিন্তু আপনারা করেননি। আপনারা লাগাতে চান না। কারণ এতে সিস্টেম লস কমে যাবে। আপনাদের আয়ও কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমি বারবার বলে আসছি এই বিষয়ে। কিন্তু আপনারা গত তিনবছর ধরে আমাকে হারিকেন দেখিয়ে আসছেন। এসব আর আমি দেখবো না। আগামী মাসেই কনসালটেন্ট নিয়োগ দেন। কনসালটেন্ট তিন মাসের মধ্যে ডিজাইন করে দেবেন। চট্টগ্রামে সাত লাখ গ্রাহক আছেন। আমি আগামী বছরের মার্চের মধ্যেই সাত লাখ প্রি-পেমেন্ট মিটারিং সিস্টেম দেখতে চাই। যে কথাগুলো বললাম মনে রাখবেন। আপনাকে (চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী) কিন্তু আমি ধরবো।
বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের প্রতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশ হচ্ছে ডিজিটাল, আপনারা পড়ে আছেন ট্র্যাডিশনালে। আপনারা একের পর এক লোক নেবেন। এই লোক নিয়োগ নিয়েও আবার চলে দুর্নীতি। ইচ্ছে করে ক্যামেরার সামনে বললাম, যাতে আপনারা লজ্জা পান।
নসরুল হামিদ বলেন, চট্টগ্রামে এসে দেখি কয়েকটি সাবস্টেশনগুলোকে জঙ্গল বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কোন কাজ নেই। বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। ইঞ্জিনিয়াররা তো খুব ভালো ছাত্র হয় জানি। চাকরিতে এসে তাদের এ অবস্থা কেন?
সারাদেশেই বিদ্যুতের খুব সংকট যাচ্ছে স্বীকার করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ দিন আগে মেঘনাঘাটে বৃষ্টির কারণে টাওয়ার ভেঙে পড়ে গেছে। এ কারণে উত্তরাঞ্চল থেকে খুব বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে গেছে কারিগরি সমস্যার কারণে। তাই ১৫শ’ থেকে ১৭ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছিলাম আমরা। এ কারণে পুরো দেশজুড়ে বিদ্যুতের খুব সংকট যাচ্ছে। তবে শনিবার (১৭ মে) থেকে পরিস্থিতি ভালো হতে শুরু করবে। আশা করছি রমজানের মধ্যে এই সমস্যা আমরা কাটিয়ে উঠবো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, কিছুদিন আগে আমরা বিদ্যুতের বিষয়ে বুক ফুলিয়ে বলতাম। কিন্তু আজ এখানে এসে তা বলতে পারছি না। এর দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে। কারণ সরকার প্রধান আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আমরা জনগণকে পুরোপুরি স্বস্তি দিতে পারছি না। আমরা সচেতন হলে, কাজের গতি বেগবান করতে পারলে এই সমস্যা থাকতো না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পিডিবি চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষে চারটি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রি পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পরে তিনি বিবিবি-আগ্রাবাদের প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশন ও বিবিবি-পাহাড়তলী প্রি-পেমেন্ট মিটারিং ভেন্ডিং স্টেশনের উদ্বোধন করেন।