গ্রামের করোনারোগীরাই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে চট্টগ্রামে, মৃত্যুও বেশি গ্রামেই

অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরই হাসপাতালে যাওয়ার প্রবণতা

করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর উপসর্গ গুরুতর হতে থাকলেও চট্টগ্রামে এখনও হাসপাতালে আসতে আগের মতোই অনুৎসাহী গ্রামের রোগীরা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ার পরই গ্রামের রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন। এর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বাঁচানো সম্ভব হয় না। গুরুতর হওয়ার আগ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এই অনাগ্রহ যেমন মৃত্যুর হার বাড়াচ্ছে, তেমনি গ্রামে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনাগ্রহ থেকে বাড়ছে সংক্রমণের হারও। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলের মানুষই করোনাকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

২০২০ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর থেকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা যেখানে ৯ হাজার ৪৯৯ জন, সেখানে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলা থেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৮৪৩ জন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিন যখন কোভিড রোগীর পরিসংখ্যানে চোখ বুলাই, মনটা খারাপ হয়ে যায়। কারণ এত কিছুর পরও গ্রামের রোগীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি। কোরবানির ঈদের পর থেকে যতগুলো রোগী মারা গেছেন করোনায়, তার বেশিরভাগই গ্রামের রোগী। করোনায় তাদের অনেকের শারীরিক অবস্থা খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ফুসফুস পুরোটাই সংক্রমিত হয়েছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে এসেছে ৪০-এর কোটাতে।’

সিভিল সার্জন বলেন, ‘এইসব রোগীকে হাসপাতাল থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা ও সেবা দিয়েও আমরা বাঁচাতে পারছি না। তবে উপজেলা পর্যায়ে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টের কিট স্বল্পতার কারণেও করোনা শনাক্ত করা যাচ্ছে না দ্রুত। আরটিপিসিআর নমুনার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু ততোদিনে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়।’

২২ আগস্ট চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত জুলাই মাসে মহানগরের ১৫ হাজার ৮২৫ জন করোনা রোগীর বিপরীতে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৪৫ জন। উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ৭৩ হাজার ৪৮৪ জনের। এই সময়ে উপজেলায় মারা গেছেন ১৬১ জন।

অন্যদিকে ২০২০ সালের ৪ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ১২৯ জন। এই একই সময়ে উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে মোট ৫১১ জনের।

চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে আক্রান্ত ও মৃত্যু— এই দুই দিক থেকেই হাটহাজারীর স্থান সবার শীর্ষে। চট্টগ্রাম নগরীর পাশের এই উপজেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। এর ঠিক পরেই রয়েছে রাউজান— ৩ হাজার ৩৯৮ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে সেখানে মারা গেছেন ৫৩ জন। শনাক্তের তুলনায় মৃত্যু বেশি সীতাকুণ্ডে। উপজেলাটিতে ২ হাজার ৩৮২ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৫২ জন।

করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি আরও যেসব উপজেলায়, তার মধ্যে মিরসরাইয়ে ১ হাজার ৪৫৬ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৪৪ জন। বোয়ালখালীতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৯৩৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। পটিয়ায় ১ হাজার ৮৩৮ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৩৮ জন। ফটিকছড়িতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬১৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের।

এছাড়া সাতকানিয়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের। রাঙ্গুনিয়ায় ১ হাজার ৭১৮ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৩৩ জন। লোহাগাড়ায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭২৪ জন, মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। আনোয়ারায় ১ হাজার ২৬৮ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ১৮ জন। বাঁশখালীতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। চন্দনাইশে ৯৫৩ জন করোনা আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ১৬ জন। সন্দ্বীপে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।

আইএমই/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!