গ্যাস সংযোগ/ ২৫ হাজার গ্রাহকের ৩০ কোটি টাকা কর্ণফুলীতে আটকা

কাল কেজিডিসিএলে গ্রাহকদের অবস্থান কর্মসূচি

চার বছর ধরে আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত ও জামানতের লাখ লাখ টাকা পরিশোধ করেও হাজার হাজার গ্রাহক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপেক্ষমাণ গ্রাহকদের আবাসিক সংযোগ বন্ধ রেখেছে। এই কাণ্ডে কেজিডিসিএলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাজার হাজার গ্রাহক।

আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে গত ২ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এবার অনুমোদিত ও জামানতের অর্থ পরিশোধকৃত অপেক্ষমাণ ২৫ হাজার গ্রাহকের আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে কাল সোমবার (১ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরস্থ কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সদর দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

এদিকে কেজিডিসিএল চলমান সংযোগ কাজ বন্ধ করার কারণে কয়েক হাজার শ্রম ঠিকাদার ও তাদের কর্মচারীরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এর আগে গত রমজানে বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগসহ অপেক্ষমান ২৫ হাজার গ্রাহককে গ্যাস সংযোগ দেওয়া না হলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

জানা যায়, কেজিডিসিএল কর্তৃক অনুমোদন ও চাহিদাপত্র পাওয়ার পর গ্রাহকেরা ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা জমা করেন। ছোট-বড় ভবন অনুযায়ী একেকজন গ্রাহক সর্বনিম্ন ২৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা দিয়েছেন। ২৫ হাজার গ্রাহক প্রায় ৩০ কোটি টাকা জমা দিয়েছেন। সেই সাথে রাস্তা খননের জন্য এই গ্রাহকেরাই কোটি কোটি টাকা ফি দিয়ে রাস্তা খননের অনুমোদন সংগ্রহ করেন। গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তি করেও সংযোগ না দেওয়ার পিছনে বর্তমান এমডিকেই দায়ী করছেন গ্রাহকরা। গত ১৭ এপ্রিল সংযোগ প্রদানের জন্য অপেক্ষমান ২৫ হাজার গ্রাহকের পক্ষ থেকে এমডিকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

গ্যাস সংযোগের অপেক্ষমান একাধিক গ্রাহক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান করে নতুন সংযোগের কথা বলতে চাই না। তবে কোটি কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে নিয়ে কোন্ অধিকারে এই কেজিডিসিএলের এমডি বসে আছেন? তার জবাব দিতে হবে। তিনি কথা দিয়েছিলেন, এ ব্যাপারে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সংযোগ প্রদানের ব্যাপারে তিনি টু-শব্দও করছেন না।

কেজিডিসিএল ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী নেওয়াজ বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাসের পর্যাপ্ত প্রবাহ আছে। ২৫ হাজার আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হলে মাত্র ৪ মিলিয়ন গ্যাস ব্যয় হবে। যা বর্তমান গ্যাসপ্রবাহে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

সংগঠনের আহ্বায়ক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই কেজিডিসিএলের অনুমোদনক্রমে অর্থ জমা করেছি। গত চার বছর ধরে সংযোগ না পেয়ে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে; তার জন্য আমরা এই ষড়যন্ত্রকারী কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। অবিলম্বে সংযোগ প্রদান না করলে এর সকল দায়-দায়িত্ব কেজিডিসিএলকেই বহন করতে হবে।’

রেজাউল করিম চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা জমা নিয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করেও গ্যাস সংযোগ দিচ্ছে না কেজিডিসিএল। আজ দেবে-কাল দেবে বলে কালক্ষেপণ করছেন তারা। নতুন সংযোগ না দিলেও পুরাতন গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া উচিত। সংযোগ না দিলে রাস্তা কাটিংসহ বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ হওয়া গ্রাহকদের টাকা কে দেবে? এর আগে আমরা সংবাদ সম্মেলন, প্রতিবাদ সভা ও মিছিল করেছি। এবার আমরা কেজিডিসিএল কার্যালয়ে অবস্থান নেবো।’

এ ব্যাপারে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাঈদ আহমদ মজুমদার রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তে চার-পাঁচ বছর ধরে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। আমরা সরকারের সাথে আলোচনা করছি। সরকার চিন্তাভাবনা করছে। গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত আসলে আমরা সংযোগ দেবো। সরকার এখনো না করেনি। না করলে আমরা জমা নেওয়া টাকা ফেরত দেবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!