গ্যাস্ট্রিক ও পেপটিক আলসার গুলিয়ে ফেলে অধিকাংশ মানুষ

পেটের ওপরের দিকে সারাদিন অল্প অল্প ব্যথা থেকে শুরু,এরপর হঠাৎ তীব্র ব্যথা আর খাওয়ার পরে বদহজম—এসব পেপটিক আলসারের লক্ষণ হিসেবে পরিচিত। সাধারণত লোকজন গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে যা বলে থাকেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাকে পেপটিক আলসার বলে। কিন্তু অধিকাংশ সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক আর পেপটিক আলসার গুলিয়ে ফেলেন। আর এতে পড়েন জীবনঝুঁকিতে।

তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, শুরুতেই পেপটিক আলসারের লক্ষণ দেখা দিলে সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে এই রোগ নিয়ে সচেতনতাও বাড়ানো উচিত।

সোহরাব হাসান। গার্মেন্টস কর্মকর্তা। বাসা থেকে অফিসের দূরত্ব বেশি হওয়ায় দুপুরের খাবার নিতে পারতেন না। দিনের পর দিন খাবারে অনিয়ম হওয়ায় প্রথমে তার ওপর পেটে ব্যথা শুরু হয়। তারপর শুরু হয় বমি। তাছাড়া প্রচুর ধূমপান করতেন সোহরাব। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে তার পেপটিক আলসার হয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা করায় তার রোগমুক্তি হয়।

বিষয়টি নিয়ে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এমএ হাছান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যারা নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন না কিংবা দীর্ঘ সময় উপোস থাকেন, তাদের পেপটিক আলসার দেখা দিতে পারে। পেপটিক আলসার যে শুধু পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পৌষ্টিকতন্ত্রের যে কোনো অংশেই হতে পারে।’

এটি কেন হয়–এর কারণ বলতে গিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘প্রধানত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ায় এ সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত অ্যাসিড পাকস্থলীর মিউকোসার পর্দা নষ্ট করে পাকস্থলীর সংস্পর্শে আসে এবং প্রদাহ তৈরি করতে পারে। আর হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়াও মিকোসাল পর্দা নষ্ট করে দেয়। অ্যাসিড পাকস্থলীর সংস্পর্শে এসে প্রদাহের সৃষ্টি করে। এছাড়া কারও পৌস্টিকতন্ত্র থেকে যদি বেশি পরিমাণে অ্যাসিড এবং প্রোটিন পরিপাককারী একধরনের এনজাইম (পেপসিন নামে পরিচিত) নিঃসৃত হতে থাকে, তবে এটি হতে পারে। আবার জন্মগতভাবে কারও পৌস্টিকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দুর্বল থাকে, তাহলেও পেপটিক আলসার হতে পারে।’

কী কারণে পাকস্থলীতে বেশি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে, এর উত্তরে ডা. হাছান বলেন, ‘ব্যথানাশক ওষুধের কারণে বেশি অ্যাসিড তৈরি হতে পারে। অনিদ্রা, অতিরিক্ত টেনশন, বেশি তেলে ভাজাপোড়া খাবার, ধূমপান ইত্যাদিও বাড়তি অ্যাসিড তৈরি করে।’

লিভার ও পরিপাকতন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিনয় পাল বলেন, ‘পেপটিক আলসারের লক্ষণ পেটের উপরিভাগে ব্যথা, জ্বালাপোড়া হওয়া, খাওয়ার পরপর ব্যথা বাড়ে (গ্যাস্ট্রিক আলসার), খালি পেটে ব্যথা বাড়া (ডিওডেসাল আলসার), ঢেঁকুর ওঠা, বদহজম হওয়া।’

এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় বলতে গিয়ে বিনয় পাল বলেন, ‘নিয়মিত খাবার গ্রহণ, ভাজাপোড়া খাবার পরিহার, দুশ্চিন্তা পরিহার, পর্যাপ্ত ঘুম, ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ অর্থাৎ অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।’

চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত অ্যান্টাসিড এবং এ জাতীয় ওষুধ সেবনে উপকৃত হন। জীবাণুজনিত কারণে যদি এ রোগ হয়ে থাকে, তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরও যদি রোগী ভালো না হন, কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পৌস্টিক নালির কোনো অংশ যদি সরু হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে অপারেশন করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এবং গ্যাস্ট্রোএন্ট্রারেলজি, মেডিসিন, পরিপাকতন্ত্র, লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এরশাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পেপটিক আলসারের সময়মতো চিকিৎসা না করালে পাকস্থলী ফুটো হয়ে যেতে পারে। রক্তবমি হতে পারে। কালো পায়খানা হতে পারে। রক্তশূন্যতা হতে পারে। ক্যানসারও হতে পারে (কদাচিৎ)। পৌস্টিকনালির পথ সরু হওয়া এবং রোগীর বারবার বমি হতে পারে। তাই শুরুতেই এ রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!