গ্যাসলাইন কেটে ফেলেছে ম্যাক্স গ্রুপের কর্মীরা, পতেঙ্গা-ইপিজেডে নরক যন্ত্রণা

রাস্তা কাটতে গিয়ে অদক্ষতায় ম্যাক্স গ্রুপ কেটেছে গ্যাসলাইনের পাইপ। চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা ও ইপিজেড এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে সোমবার মধ্যরাত থেকে। কী কারণে বন্ধ—এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাসের কোন ব্যাখ্যা না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে ২ লাখ গ্রাহকসহ পরিবারগুলোর অন্তত ১০ লাখ মানুষ। টানাবৃষ্টিতে গ্যাস সরবরাহ না থাকায় এ দুর্ভোগ আরও বাড়ছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় কাউন্সিলররা।

সোমবার (৭ জুলাই) মধ্যরাত তিনটার দিকে ইপিজেড থানার মহাজনঘাটা এলাকায় মাটি তুলে গিয়ে একটি হাইপ্রেসার লাইন কেটে ফেলে নগরীর ফ্লাইওভার নিমার্ণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের কর্মীরা।

অভিযোগ রয়েছে, ফ্লাইওভার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের কর্মীদের পরিকল্পনাবিহীন মনগড়া কাজ ও গাফেলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে। জানা যায়, ১৫ দিন আগেও সিমেন্স হোস্টেল এলাকায় রাত একটার দিকে রাস্তার মাটি কাটতে গিয়ে গ্যাসলাইন কেটে ফেলে ম্যাক্সের কর্মীরা। পরে বিষয়টি জানার পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মীরা রাত থেকে মেরামতের কাজ শুরু করে, যা সকালে কাজ শেষ হয়।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় পতেঙ্গা, কাটগড়, স্টিল মিলস, ইপিজেড, আকমল আলী, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনাইটেড পাওয়ার, নিউমুরিং, সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে বাসিন্দারা। সকালে টানা বৃষ্টি ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় নরক যন্ত্রণায় পড়েছে এলাকাবাসী।

এদিকে সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে এখানো লাইন মেরামতের কাজ শুরু করতে পারেনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। বিকেল চারটা পর্যন্ত এই রিপোর্ট লেখায় এখনও মেরামতের কাজ শুরু করতে পারেনি তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।

কাটগড় এলাকার ব্যবসায়ী মো. খোকন বলেন, ‘ভাই কী বলবো, সকাল থেকে গ্যাস নেই। বারবার গ্যাসলাইন কেটে ফেলছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স। এ প্রতিষ্ঠান কি ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াই কাজ করেন, নাকি ইঞ্জিনিয়ার কর্মস্থলে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দায়িত্ব পালন করেন?’

আকমল আলী এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘অবহেলার কারণে বারবার গ্যাস লাইন কেটে ফেলার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছি। সকাল থেকে গ্যাস বন্ধ থাকায় তিনটার পরে দোকান থেকে খাবার এনে কোনমতে একবেলা খেলাম। কখন গ্যাস আসবে জানি না। গ্যাসলাইন কেটে ফেলা এখন একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে দেখছি।’

৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ম্যাক্স একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। তাদের শ্রমিকদের গাফেলতিতে বারবার এ এলাকায় গ্যাসলাইন কাটা যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছে দুই লাখ গ্রাহক। ভোগান্তিতে পড়েছে অন্তত ১০ লাখ মানুষ। আজ সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে অনেকে বাসা বাড়িতে রান্না করতে পারেননি। গ্যাস না থাকায় পতেঙ্গা-ইপিজেড এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।’

এদিকে সকাল থেকে ইপিজেড ও পতেঙ্গা বন্দর এলাকায় টানা বৃষ্টিতে বাসাবাড়ি, সড়ক ও অলিগলিতে পানি জমে মানুষ রয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগে। পাশাপাশি সকাল থেকে গ্যাস না থাকায় কেউ লাকড়ি চুলা ও সিলিন্ডারের সাহায্যে রান্নার কাজ সারেন। এছাড়া অনেককেই খাবারের জন্য হোটেল-রেস্টুরেন্টে ভিড় করতে দেখা যায়।

কেজিডিসিএল’র জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন ও মার্কেটিং) সারোয়ার আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল রাত তিনটার পর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। ম্যাক্স গ্রুপের শ্রমিকরা ফ্লাইওভার নির্মাণের মাটি কাটতে গিয়ে গ্যাসলাইন কেটে ফেলে। এ কারণে গ্যাস সংযোগ বন্ধ। বৃষ্টির কারণে মেরামতে কাজ শুরু করতে পারছি না। সংস্কার করার টিম প্রস্তুত আছে। বৃষ্টি থামলে কাজ শুরু হবে।’ তবে লাইন কখন ঠিক হবে, নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (২০১৯) ইপিজেড থানার আকমল আলী এলাকায় মাইট্টাখাল থেকে মাটি তুলতে গিয়ে গ্যাসের একটি লাইন কেটে ফেলেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। দীর্ঘদিন লেগে যায় এ মেরামতের কাজ শেষ করতে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন তিন থানার বাসিন্দারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!