গোসাইলডাঙ্গা কাউন্সিলরের রহস্যময় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’

সন্ধ্যায় বসে মদ গাঁজার আসর

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নামে রয়েছে দুটি কার্যালয়। এই দুটি কার্যালয়ের মধ্যে একটিতে লেখা রয়েছে ‘অস্থায়ী কার্যালয়’। নামে কাউন্সিলরের কার্যালয় হলেও দিনে সেখানে কী চলে— এ নিয়ে সেই শুরু থেকে রহস্যের মধ্যে রয়েছে এলাকাবাসী। তবে সন্ধ্যার পর এ কার্যালয়ে বসে মদ ও জুয়ার আসর— এ কথা এলাকার সবাই জানেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরপরই অচেনা-অজানা লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায় সেখানে। রাত গড়াতেই সেখানে আতিথ্য নেন বন্দর থানা পুলিশের একাধিক সদস্য।

কাউন্সিলরের ওই ‘অস্থায়ী কার্যালয়ের’ সার্বিক সহযোগিতায় আবার লিখিতভাবেই আছে ‘গোসাইলডাঙ্গা তরুণ সংঘ’ নামের একটি সংগঠন। কার্যালয়ে কী হয়— এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে খোলাখুলি স্বীকার করে নিয়েছেন গোসাইলডাঙ্গা তরুণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রঞ্জন খেলু। তিনি বললেন, ‘মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে (সেখানে) মদ-গাঁজার আসর বসে।’ যদিও বর্তমান কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এমন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, ‘এলাকার মানুষের বিচারের সুবিধার্থের তরুণ সংঘের এ সুব্যবস্থা।’

সরেজমিনে দেখা যায়, আগ্রাবাদ যমুনা ভবনের বিপরীতে শীল কলোনীর স্বপ্নবিলাস কমিউনিটি সেন্টারের পাশের একটি ভবনের এই অস্থায়ী কার্যালয়। সেখানে নামফলকে লেখা রয়েছে, ‘অস্থায়ী ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয় ও দাতব্য চিকিৎসালয়, সার্বিক সহযোগিতায় গোসাইলডাঙ্গা তরুণ সংঘ।’

তরুণ সংঘের নেতারা দাবি করেছেন, এটি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় এবং বিচারিক কার্যালয়। যেখানে রাতদিন বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

সুদৃশ্য ভবনে বাহারি নামফলক

রহস্যময় সাইনবোর্ডধারী ভবনটি নিয়ে এলাকাবাসীর মনে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে আতঙ্ক। কারণ সন্ধ্যার পরই এটি পরিণত হয় আতংকের জনপদে। এ কারণে শীল কলোনির বাসিন্দারা তাদের সব প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সেরে নেয় সন্ধ্যার আগেই। তবে ভয়ে মুখ খোলে না কেউই।

সরেজমিনে জানা যায়, গোসাইলডাঙ্গা তরুণ সংঘের নেতৃত্বে রয়েছেন আবিদ হাসান নাঈম, বিশ্বজিত রঞ্জন খেলু, জামশেদ পাজিরাসহ আরও কয়েকজন। এর মধ্যে তরুণ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জামশেদ পাজিরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী জিন্নাত আরা বেগমের স্বামী। আর সভাপতি আবিদ হাসান নাঈম হচ্ছেন জামশেদ পাজিরার চাচাতো ভাই। মূলত এদের নেতৃত্বেই পরিচালিত হচ্ছে রহস্যময় এ কার্যালয়টি।

আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ভবনটি আরেক রূপ নিয়েছে। দিনরাত চলে ‘আড্ডা’। বাড়ে অচেনা মানুষের আনাগোনাও।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এটি কাউন্সিলরের অস্থায়ী কার্যালয় নয়। এখানে কাউন্সিলরকে দেখাই যায় না। একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের দুটি কার্যালয়ের নজির দেশের কোথাও আছে বলে মনে হয় না। এখানে সন্ধ্যার পরপরই চলে মাদক ও জুয়ার আসর। রাত গড়ালেই একের পর এক আসতে থাকেন বন্দর থানা পুলিশের সদস্যরা। কেউ প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলার ভয় দেখানো হয়।

৩৬ নম্বর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে দুটি কার্যালয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এলাকার মানুষের সুবিধার্থেই এ কার্যালয়। এখানে প্রতিমাসে ২ দিন ডাক্তার বসে। এছাড়া এ অফিসে গোসাইলডাঙ্গা তরুণ সংঘের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।’ তিনি দাবি করেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে এটি ষড়যন্ত্র।’

তরুণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত রঞ্জন খেলু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে মদ গাঁজার আসরের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেই এসব আয়োজন হয়।’

বন্দর থানা পুলিশের আনাগোনা কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংগঠনের সভাপতি আবিদ হাসান নাঈমের সঙ্গে বন্দর থানা পুলিশের বিশেষ সখ্যতার কারণেই পুলিশের আসা-যাওয়া করে এখানে।’

তরুণ সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জামশেদ পাজিরা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে মদ ও জুয়ার আসরের বিষয়টি সঠিক না। এখানে তরুণ সংঘের অফিসের কাজ চলে।’

বন্দর থানার ওসি সুকান্ত চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বিষয়টি জানা ছিল না দাবি করে বলেন, ‘এর আগে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!