গোপালগঞ্জের এক মশিউরের টোপ গিলে চট্টগ্রামের ৩৯ ব্যবসায়ী সর্বহারা

পণ্য ডেলিভারি নিয়ে ১০-২০ শতাংশ অর্থ নগদে এবং বাকি অর্থ চেকে পরিশোধ করতেন মশিউর রহমান। সেই পণ্য অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে নগদে বিক্রি করতেন তিনি। ওদিকে চেকের টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে ডিজঅনার (প্রত্যাখ্যাত) হয় চেক। এভাবে চট্টগ্রামের ৩৯ জন ব্যবসায়ী গোপালগঞ্জের মশিউর রহমানের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

পণ্য গ্রহণ করে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৯ জন ব্যবসায়ী থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া গোপালপুুরের মশিউর রহমান খান। এর মধ্যে এসআর ট্র্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. শেহাব উদ্দীনের কাছ থেকে ৭৭ লাখ টাকা, খাজা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, আরএসআরএমের মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা।

এছাড়াও প্রতারণার শিকার হয়েছেন সামী কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী রাফিউল কালাম বাবুু, কানেক্ট-৩ এর স্বত্বাধিকারী ফারহান, ঐশি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মোশরফ হোসেনত, রক্সি পেইন্টের স্বত্বাধিকারী এমদাদ, বিছমিল্লা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোস্তাক, মোহাম্মদী বিল্ডার্সের নুরুল রহমান মজুমদার, মদিনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নিয়ামত উল্লাহ, ইমন মেডিকেলের স্বত্বাধিকারী সুভাষ দেব, বিএম ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. মহিউদ্দীন, আইডিয়া পেপার অ্যান্ড স্টেশনারীর স্বত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর, একতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম, এসকে ইলেকট্রিক সার্ভিসের স্বত্বাধিকারীর আবু সৈয়দ, স্মার্ট কুল ইঞ্জিনিয়ারের স্বত্বাধিকারী তারেক আহমেদ প্রতারক মশিউর রহমান।

এছাড়া আরও ২৩ জন ব্যবসায়ী প্রত্যেকে ৩০ লাখ টাকা, ২০ লাখ টাকা, ১০ লাখ টাকা, ৬ লাখ টাকা করে প্রতারিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকার মধ্য বাসাবো থেকে মশিউর রহমানকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তিনি বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

এদিকে প্রতারক মশিউর রহমানের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুুরের চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন প্রতারণা শিকার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধনে ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘প্রতারক মশিউর রহমানকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার সহযোগীরা পাঁয়তারা করছে এবং বিশেষ মহলের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তার সহযোগীরা যেন কোনভাবেই তাকে আইনের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিতে না পারে।’

মানববন্ধনে প্রতারক মশিউর রহমান খানের যেন সুষ্ঠু বিচার হয় এবং আইনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা উদ্ধার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

মানববন্ধনে অংশ নেন খাজা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী মো. মোশারফ হোসেন চৌধুরী, আরএসআরএমের মোহাম্মদ আলী, স্মার্ট কুল ইঞ্জিনিয়ারের স্বত্বাধিকারী তারেক আহমেদ, আইটি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।

আরএসআরএমের মোহাম্মদ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগ্রাবাদে ‘জাহান গ্রুপ’ নামে অফিস খুলেছিল প্রতারক মশিউর রহমান। সে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিতো। বাকিতে পণ্য কিনে চেকে পরিশোধ করতো। পরবর্তীতে ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে সব চেক ডিজঅনার হয়। এখন অফিস বন্ধ। এভাবে আমরা প্রতারণা শিকার।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!