গোপনে ত্রাণ পৌঁছে দেয় চট্টগ্রাম কক্সবাজারের একদল প্রবাসী তরুণ

প্রাণঘাতী করোনায় থমকে গেছে জীবন। বন্ধ হয়ে গেছে রোজগার। খাদ্যের জন্য দিশেহারা শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সামনের দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই দুশ্চিন্তায় চোখে ঘুম নেই অনেকের। এমন সংকটময় মুহূর্তে মানবতার কল্যাণে এগিয়ে এসেছেন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার একদল তরুণ। তবে এসব তরুণের বাড়ি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে হলেও থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান, আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, ইরাক, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, গ্রিস, ইতালি ও ফ্রান্সে।

করোনার এই দুঃসময়ে বিবেকের তাড়নায় তারা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৮ গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে যেসব লোক গ্রামগঞ্জে ত্রাণ না পেয়ে চোখের আড়ালে পড়ে আছে তাদেরই খুঁজে বের করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ত্রাণসামগ্রী। তবে যাদের ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তাদেরও কোনো ছবি তোলেন না তারা। সবাই প্রবাসে থাকলেও পরিবারের সদস্য অথবা এলাকার লোকজনের মাধ্যমে রাতে কিংবা দিনে প্রত্যেক অসহায় পরিবারে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন এসব তরুণ। তবে তারা এটি করছেন প্রবাসী একতা সংঘ (সংক্ষেপে পিএএস) নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে। বর্তমানে এটির সদস্য সংখ্যা ৪৫।

শুধু ত্রাণসামগ্রী নয়, ২০১৮ সাল থেকে প্রবাসে যারা বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকেন তাদেরও বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সংগঠনটির সদস্যরা। এছাড়া সংগঠনের কোনো সদস্য বিদেশে চাকরি হারালে অথবা কোনো সমস্যা পড়ে দেশে চলে আসলে তাদেরও সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। তবে এ সহযোগিতা করা হয় সংগঠন থেকে টাকা দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মাধ্যমে। যাতে বিদেশফেরত সদস্যরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

প্রবাসী একতা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর তরুণ এহসানুল হক মনির জানালেন সংগঠনের শুরুর গল্প— ‘২০১৮ সাল। লক্ষ্যটা ছিল একটু বড়। প্রবাসে কষ্টে পড়া ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন। প্রবাসে ব্যস্ত জীবনে আর কতজনইবা তাদের কথা মনে রাখে? তাদেরও রয়েছে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ, মূলত এই চিন্তা থেকেই সংগঠনটি করা।’

‘শুরুটা হয়েছিল তিন বন্ধুর মাধ্যমে। তিনজন তিন দেশে থাকলেও আমাদের যোগাযোগ হতো ফেসবুক, ইমো কিংবা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে। একদিন হঠাৎ তিনজনই সিদ্ধান্ত নিই আমরা এমন একটি সংগঠন করবো যেটির মাধ্যকে প্রবাসীসহ আমাদের গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে। এর পরই ফেসবুকে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিই এবং খুঁজতে থাকি বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী ভাইদের। প্রথমে তেমন কেউ গুরুত্ব না দিলেও এখন সবাই সাড়া দিচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের সংগঠনে ১১টি দেশের ৪৫ জন সদস্য রয়েছে। এখন অনেকে সদস্য হতে চাচ্ছেন, সামনে আমরা আরও সদস্য বাড়াবো। তবে বেশিরভাগ সদস্য মধ্যপ্রাচ্যের হলেও এবার একটু বেশি গুরুত্ব দেবো ইউরোপের দিকে’— জানালেন প্রবাসী একতা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা।

তিনি আরও বলেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের প্রবাস জীবনের কষ্টের টাকায় গ্রামের শ্রমজীবী-দিনমজুর মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে পেরে ভালো লাগছে। আসলে এই বিপদের দিনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে একপ্রকার আনন্দ এবং তৃপ্তি আছে। আমরা আগামীতে চেষ্টা করবো আরও কয়েকটি গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করার।’

তবে তিনি অকপটে স্বীকার সংগঠনের দুই প্রতিষ্ঠাতা সাকিব মারুফ ও মোহাম্মদ ইউনুছের কথা। দুজনের মধ্যে সাকিব মারুফ দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনের অর্থ সম্পাদকের এবং মোহাম্মদ ইউনুছ দায়িত্ব পালন করছেন প্রচার সম্পাদকের।

এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন বাঁশখালীর উপজেলার পুঁইছড়ির গোলাম আজম। এছাড়া সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন নুরুল আবছার ও সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ফরিদ শামীম।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!