গৃহকর নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান চাই-মেয়র

গৃহকর নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান চাই-মেয়র 1সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর একক উদ্যোগে সভা আহ্বান ও ইতিপূর্বে আরো কয়েকটি বৈঠক ও সভা আহ্বান প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য ২২ অক্টোবর এক বিবৃতি প্রদান করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমি মেয়র হলেও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতির পরামর্শক্রমে সাধারণ সম্পাদক সভা আহ্বান করেন কিন্তু বিগত ২০ অক্টোবর, শুক্রবার, ও এর পূর্বে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতির বাসভবনে কয়েকটি সভা আহবান করা হয়েছে, যা সংগঠনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে আমার সাথে কোন ধরনের আলাপ বা কথা বলা হয়নি। যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি বলে আমি মনে করি। আমি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হলেও দলের সাধারণ সম্পাদক।

দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বাড়ানো ও জনমত সরকারের অনুকুলে রাখা আমার দায়িত্ব। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দলের সভাপতির সাথে আলোচনা ও পরামর্শক্রমে নগর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন সভা ডাকা ও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা আমার দায়িত্ব। দলীয় সভাপতির বাসভবনে সম্প্রতি কয়েকটি বৈঠক এবং বিগত ২০শে অক্টোবর, শুক্রবারের সভার বিষয়ে আমি অবহিত নই। তবে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।

ঐ সভায় পৌরকর নিয়ে দল ও সরকারকে বিব্রত করা হচ্ছে মর্মে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাহা কোন ক্রমেই গ্রহনযোগ্য নহে। বরং সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ও কার্যকরি কমিটির অনেককে অবহিত না করে সভায় যেসব আলোচনা করা হয়েছে তাহা বিভ্রান্তিমূলক ও সঠিক নয়। হোল্ডিং ট্যাক্স সম্পর্কে ইতিপূর্বে আমি বিভিন্ন সংবাদ ও সভার মাধ্যমে মেয়র হিসাবে আমার অবস্থান তুলে ধরেছি। এ বিষয়ে সাবেক মেয়র নিশ্চয়ই অবহিত আছেন। সিটি কর্পোরেশন রাষ্ট্রের বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা পরিচালিত এবং সরকার সিটি কর্পোরেশনের সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন। প্রতি পাঁচ বছর পর পর হোল্ডিং ট্যাক্স পুন:মূল্যায়ন করার আইনি বিধানের আলোকে বর্তমানের হোল্ডিং ট্যাক্স পুন:মূল্যায়ন করা হয়েছে।”

আ জ ম নাছির উদ্দীন আরো বলেন, “মেয়র সরকারের অংশ ও প্রতিষ্ঠান। যিনি মেয়র তাকে আইনী কাঠামোর মধ্যে চলতে হয় এবং তার মধ্যেই উন্নয়ন ও জনসেবা পরিচালনা করতে হয়, কথাটা বার বার আমি বোঝাতে চেষ্টা করেছি। পৌরকর নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে অথচ আজ পর্যন্ত আমরা সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাইনি। তবুও সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ও জনপথের উন্নয়ন, ময়লা-আবর্জনা অপসারন, নালা ও খাল পরিচ্ছন্ন রাখা, জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক মেয়র আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা আলহাজ্ব এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর
পাতা-২
পরামর্শকে স্বাগত জানাই। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মেয়রের দায়িত্ব পালনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সকল ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তির উর্ধ্বে উঠে আমাকে সহযোগীতা করবেন এটা আমার প্রত্যাশা। বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ, গ্যাস, চউক, ওয়াসা, বন্দর, পুলিশ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময়কে আমি সাধুবাদ জানাই। তবে কার্যকরী কমিটির সভা করে এ সব কার্যক্রম গ্রহন করা হলে সংগঠন গতিশীল হতো, নেতৃত্বের ভাবমূর্তি বিকশিত হত বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, “সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পৌরকর বিষয়ে আইনি কাঠামো কার্যক্রম সম্পর্কে ধারনা কম।

গৃহকর নির্ধারনে এসেসমেন্ট করা একটি আইনের বিধান। যাহা প্রতি পাঁচ বছর পর পর সু-নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশনকে পালন করতে হয়। বিএনপি মনোনীত সাবেক মেয়র আলহাজ্ব মোহাম্মদ মনজুর আলমের সময়ও এসেসমেন্ট হয়েছিল। আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে পৌরকর ও রেইট ধার্য করা হয়েছিল। আজ যারা গৃহকর নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলছেন, সেদিন তারা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ ছিলেন। এর কারন আজো জনগণ জানতে পারেনি। যদি জনগণের প্রতি এতই দরদ থাকত তাহলে আজকের মতই সোচ্চার হতেন। কি কারনে সেইদিন তারা নিশ্চুপ ছিলেন? তা নগরবাসী জানতে চায়। পূর্বের মেয়রের আমলে এসেসমেন্টকালে কোন বাদ-প্রতিবাদ হয়নি, তাহলে এখন কেন “রিভিউ বোর্ডে” আপত্তি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়ার আগেই এতো হৈ-চৈ ? এ কারনেই কর্মসূচিগুলো উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে আমি মনে করি।” জনাব আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “ঢাকা সিটি কর্পোরেশনেও এসেসমেন্ট শুরু হয়েছে, একই আইনের ধারা প্রয়োগ করে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেতো কোন পর্যায়ের আওয়ামীলীগ নেতারা ঐ বিষয়ে কোন সভা-সমাবেশ বা কোন বিবৃতিও প্রদান করেন নি। ১০-২০ গুন এমনকি ৫০ গুন পর্যন্ত গৃহকর বাড়ানো হয়েছে এমন অভিযোগ মোটেও ঠিক নয়। তিনি বলেন, “ সিটি কর্পোরেশন প্রাথমিক ভাবে সম্পন্ন করা এসেসমেন্টে সর্বমোট ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪৮টি হোল্ডিং এর বিপরীতে প্রস্তাবিত বার্ষিক কর ও রেইট ৮৫১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে নতুন ২৮ হাজার ৭০২টি হোল্ডিং এর বিপরীতে কর রেইট ৪৭ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকা। ২০০৮-২০০৯ হতে ২০১১-২০১২ অর্থ বছর পর্যন্ত এবং সে সময় হতে ২০১৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত কোয়াটারলি এসেসমেন্ট সহ পূর্বের এসেসমেন্ট অনুযায়ী ধার্যকৃত মোট দাবির পরিমান ছিল ২০০কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। বর্তমান এসেসমেন্ট হতে নতুন হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ধার্যকৃত কর ও রেইট বাদ দিলে মোট দাবির পরিমান ৮০৪ কোটি টাকা। সিটি কর্পোরেশন কর তপসিল ২০১৬ অনুযায়ী ইমারত ও জমির উপর কর ৭ শতাংশ, ময়লা নিস্কাশন রেইট ৭ শতাংশ, সড়ক-বাতি ৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য কর ৮ শতাংশ অর্থাৎ সর্বমোট ২৭ শতাংশ কর ও রেইট নেওয়ার বিধান থাকলেও চসিক নগরবাসীর সুবিধার্থে পূর্বের ন্যায় ২৫টি ওয়ার্ডে ১৭ শতাংশ এবং ১৬টি ওয়ার্ডে ১৪ শতাংশ কর আদায় করার সিদ্ধান্ত অব্যাহত রাখা হয়েছে।এখানে আরো উল্লেখ্য যে, হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে ও আইনের আলোকে পূর্বতন ১তলা বাড়ি আজ বহুতলে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে আয়ের সাথে সংগতি রেখে নিয়মমাফিক সেক্ষেত্রে পৌরকর বৃদ্ধি পাবে- এটাই স্বাভাবিক।”

তিনি আরো বলেন,“এতদ্বসত্ত্বেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত গৃহকর (পৌরকর) নিয়ে করদাতাদের যে কোন ধরনের অভিযোগ আপত্তি “রিভিউ বোর্ডে” নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রিভিউ বোর্ডে প্রস্তাবিত করকে সহনীয় পর্যায়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮ অক্টোবর ২০১৭ সংবাদ
সম্মেলন এর মাধ্যমে আমি মেয়র হিসাবে বলেছি রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্তে সকলেই খুশি হবেন। বিধি অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ বিশেষ সুবিধা পাবেন এবং বোর্ডের মাধ্যমে আরো কিছু বাড়তি সুবিধা নাগরিকদের দিতে আমি আগ্রহী। যেমন দরিদ্র,অস্বচ্ছল ও আদিবাসীদের নূন্যতম কর ধার্য্য করা, ব্যাংক ঋন থাকলে তা সমন্বয় করা এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া যাবে।

প্রয়োজনে সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্য হতে ১/২ জন প্রতিনিধিও রিভিউ বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ”চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আরো বলেন, “আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের চিন্তা, চেতনা, ধ্যানধারনা ও মনমানসিকতার উন্নয়ন ও পরিবর্তন খুবই জরুরী। সিটি কর্পোরেশনকে কাঙ্খিত সেবা প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠানে পরিনত করার মানসে কর্পোরেশনের প্রাপ্য কর ও ফি পরিশোধ করার ইতিবাচক মনমানসিকতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা উন্নয়ন বান্ধব চিন্তা চেতনার দিকে অগ্রসরমান থাকা অবস্থায় আমাদের সকলকে আন্তরিকভাবে সহযোগীতার হাত প্রসারিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি সু-দীর্ঘ ১৭ বছর মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তিনি একজন প্রবীন নেতা। এক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে কোন পরামর্শ থাকলে, চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে তা আমার সাথে আলোচনা করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে আইনি কাঠামোর মধ্যে অবশ্যই আমি পরিকল্পিত নগরায়নে ও জনস্বার্থে তাঁর পরামর্শকে প্রাধান্য দেবো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি মেয়র ছিলেন।

আইনি কাঠামোর মধ্যে তিনি সহযোগীতা দেবেন, এ প্রত্যাশা আমার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম মহানগরের ৬টি আসনেই আমরা জয়লাভ করতে চাই, প্রতিটি আসনে দলের একাধিক প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তভাবে মনোনীত করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা। ফলে প্রার্থীতা নিয়ে কোনরূপ দলীয় কোন্দল কাম্য নহে। আমাদের সকলকে দলীয় ঐক্য সুদৃঢ় করার চেষ্টা করতে হবে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারনায় দলের সাধারণ নেতা, কর্মীবৃন্দ স্বাভাবিক ভাবেই বিভ্রান্তির বেড়াজালে ঘোরপাক খাচ্ছেন-যা কাম্য নয়। আ জ ম নাছির উদ্দীন দেশ, জাতি ও নগরবাসীর স্বার্থে, সরকারের ভাবমূর্তি সমুজ্জল রাখতে এবং সাধারন নাগরিকদের মনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিরত থাকার উদাত্ত আহ্বান জানান।”

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!