গুড় নয়তো উপোস— চট্টগ্রাম কারাগারে ডায়াবেটিস রোগীদের করুণ দশা

সাধারণ হাজতিদের মতো কোর্টে হাজিরা দিতে আসা হাজতি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও সরবরাহ করা হচ্ছে শুকনো চিড়া ও গুড়। আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কোর্টে আনা বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ এবং বাইরে থেকে খাবার দেওয়ার সুবিধা থাকলেও কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আপাতত তা বন্ধ রয়েছে।

গত ৩০ জুলাই কারা কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে চিড়া-গুড় কার্যক্রম উদ্বোধন করে। কারাগারে থাকা বন্দিদের অনেকেরই রয়েছে ডায়াবেটিস সমস্যা। ডায়াবেটিসে ভোগা কারাবন্দির প্রকৃত সংখ্যা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। কারাগার থেকে সপ্তাহে ৫ দিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ বন্দিকে হাজিরা দেওয়ার জন্য কোর্টে পাঠানো হয়। কারা কর্তৃপক্ষ দুপুরের খাবার হিসেবে সাধারণ বন্দিদের জন্য যে চিড়া-গুড় পাঠায়, সেটাই খেতে হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদেরও। অথচ গুড় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ‘বিষ’ বলেই স্বীকৃত।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (মেডিসিন) জসিম উদ্দিন বলেন, কারো রক্তের মধ্যে গ্লুকোজ ১৮০ প্যারামিটারের ওপরে গেলে আমরা তাকে ডায়াবেটিস রোগী হিসেবে চিহ্নিত করি। গুড় বা চিনি হঠাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়।

দীর্ঘদিন হাজতে থাকা বন্দিদের সাথে বাধ্য হয়ে শুকনো চিড়া আর গুড় খেতে হচ্ছে ডায়াবেটিস রোগীদেরও। যারা এটা নিতে চান না তাদের সারাদিন প্রায় উপোসই থাকতে হচ্ছে। একদিকে গুড়, অন্যদিকে উপোস— দুটোই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকির কারণ বলে জানিয়েছেন সার্জিকেয়ার হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. খাজা হোসেন কাওসার রিপন। তিনি বলেন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেশি হলেও বিপদ, কম হলেও বিপদ।

বন্দিদের প্রাণহানি ঘটলে এর দায়ভার কে নেবে— এমন প্রশ্ন তুলেছেন জনৈক বন্দি সাইফুল ইসলামের (৫৫) স্ত্রী কামরুন্নাহার।

কোর্ট ইন্সপেক্টর আহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘কারাগার থেকে আমাদের কাছে বন্দিদের দুপুরের খাবার হিসেবে চিড়া, গুড় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আমরা এখান থেকে শুধু পানি সরবরাহ করে থাকি। এছাড়া বাইরে থেকে হাজতিদের কোনো খাবার বা সাক্ষাৎ প্রদান বন্ধ রয়েছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোর্টে আসামিদের সাথে উকিল ছাড়া কারও সাক্ষাৎ করার নিয়ম নেই। আগে বন্দিদের সাথে তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎ বা খাওয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও এখন তা বন্ধ।’

তবে প্রতিদিন বিশেষ করে বয়স্ক বন্দিদের অসুস্থ্ হয়ে পড়ার কথা স্বীকার করেন তিনি।

ডায়াবেটিস রোগীদের বিষয়টি মাথায় না রেখে গুড় দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত কেন গ্রহণ করেছে— জানতে চাওয়া হলে চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার নাসির উদ্দিন বিষয়টি জানতেন না বলে জানান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আশ্বাস দেন তিনি।

সিআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!