গুঁড়ি বৃষ্টি এল চা-বাগানে আশীর্বাদ নিয়ে, বাড়বে উৎপাদন

চা বাগানের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেই বুঝা যায় আগামীতে সুদিনের বার্তা। এবার সেই গুঁড়ি বৃষ্টি দেখা দিয়েছে কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই। প্রতিবছর মার্চে বৃষ্টির দেখা মিলতো। কিন্তু এবার ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি।

এটি চা বাগানের জন্য শুধু আর্শিবাদই নয়, মহা আর্শিবাদ। কারণ চা উৎপাদন শুধুই বৃষ্টির উপর নির্ভর করে। যে বছর ভালো বৃষ্টিপাত হয় সে বছর চা উৎপাদন ভালো হয়। তাই চা উৎপাদনের শুরুতে বৃষ্টি হলো আর্শিবাদ।

এ বৃষ্টির জন্য চা শ্রমিকরা পালন করে গ্রাম পূজা। গ্রামের মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে চাল-ডাল নিয়ে পূজার অর্চনাতে আকাশ থেকে আশীর্বাদ দেয় ভাগ্যদেবী। চা শ্রমিকদের মাঝে এখনও এমন ধারণার প্রচলন রয়েছে।

জানা যায়, চা উৎপাদনের মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে বৃষ্টি চা বাগানের জন্য বেশ উপকারি; এ বৃষ্টি চা বাগানের সুদিন নিয়ে আসে। প্রকৃতির নিয়মে যথাসময়ে এ বৃষ্টি হলে ওই বছর চায়ের উৎপাদন ভালো হয়।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকেই এমন কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা পেয়ে চট্টগ্রামের ২১টি চা বাগান এলাকায় খুশির সীমা নেই। বাগান মালিক, ম্যানেজার থেকে শুরু করে চা শ্রমিকের মাঝে দেখা দিয়েছে আনন্দ।

বুধবার বিকেলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বজ্রপাত হয়েছে চা বাগান এলাকায়। চা বাগানীদের মতে, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহে পাতা সংগ্রহ করে চা বাগানগুলো। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। মার্চে প্রথম সপ্তাহ থেকেই পাতা সংগ্রহ করতে পারবে বাগানীরা।

বিগত দুই বছরের হিসেবে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম বৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে প্রথম বৃষ্টি হয় ৫ মার্চ। ফলে ২০১৭ সালে চা উৎপাদন এক মাস পিছিয়ে যায়, উৎপাদন কম হয়।

গতবছর ফেব্রয়ারির ১৭ তারিখে বৃষ্টি হয়েছিল। এতে বেশ উপকার হয় চা বাগানের। কিন্তু আর আগের বিগত বছর গুলোতে জানুয়ারিতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতো। ফেব্রুয়ারিতে চায়ের জন্য উপযোগী আশির্বাদ বৃষ্টি পাওয়া যেত।

বৃষ্টিপাত হলে নতুন কুড়ি উৎপাদন (টিপিং) করতে পারে বাগানগুলো। ফলে বৃষ্টিতে বাগান কর্তৃপক্ষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।

এ বিষয়ে বংলাদেশ চা এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি হালদাভ্যালী চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বৃষ্টি হয়েছে হালদাভ্যালী চা বাগানে। এ সময়ের বৃষ্টি চা বাগানের জন্য আর্শিবাদ বয়ে আনে। চায়ের মৌসুম শুরুর দিকে যতবেশি বৃষ্টি হবে তত চায়ের মান ভালো হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক বৈরি প্রভাবটা প্রথমেই চা বাগানের ওপর পড়েছে। কোনো কোনো চা বাগান বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই চা উৎপাদনের জন্য বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

চট্টগ্রামের কর্ণফূলি চা বাগানের ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, কর্ণফুলি চা বাগান এলাকায় আধা ইঞ্চি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। অনেক দিন ধরে আমরা বৃষ্টি পাচ্ছিলাম না। বিকেলে বৃষ্টি হয়েছে কম, তবে যা হয়েছে তাও স্বস্তি ফেলার মতো। রাতে আরও বৃষ্টি হবে আশা করছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চট্টগ্রামের ২১টি চা বাগানে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির তারতম্য লক্ষ্য করেন বাগান কর্তৃপক্ষ। এতে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ভয়াবহ হুমকির আশংকা করছেন কর্তৃপক্ষ।

আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি মাটিক্ষয়সহ উর্বরতা ধবংস করে। ফলে বাগানের উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। অনিয়মিত বৃষ্টি বাগানের চা উৎপাদনে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি করে। কিছু কিছু চা বাগান কৃত্রিমভাবে ইরিগ্রেশনের ব্যবস্থা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির রামগড়, আঁধার মানিক, নাছেহা, দাঁতমারা, নিউ দাঁতমারা, মা-জান, নেপচুন, পঞ্চবটি, মুহাম্মদ নগর, হালদাভ্যালী, এলাহী নুর, রাঙ্গাপানি, বারমাসিয়া, উদালীয়া, খৈয়া ছড়া, আছিয়া ও কর্ণফুলী এবং বাঁশখালির চাঁদপুর বেলগাও, রাঙ্গুনিয়ার কুদালিয়া, আগুনীয়া, ঠান্ডাছড়িসহ মোট ২১টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৭টি।

চা-বাগান মালিক ও ম্যানেজারদের দাবি, চা-বাগানের উৎপাদন নির্ভর করে পুরোটাই প্রকৃতির ওপর। আবহওয়া ভালো হলে প্রতি বছর এক একটি বাগান থেকে আরও দুই থেকে তিন লাখ কেজি চা উৎপাদন বেশি হত। শুধু জলবায়ুর কারণে চলতি মৌসুমে কম উৎপাদনের আশংকা রয়েছে।

এ ব্যাপারে নেপচুন চা বাগানের ম্যানেজার কাজী এরফানুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাগানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত বিলম্বিত এবং অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। যার ফলে খরা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। চা উৎপাদনও দিন দিন কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বাগানের উৎপাদন ২০ শতাংশ কমে গেছে এবং কৃত্রিম জলসেচ ব্যবহারের ফলে ৫ থেকে ৬ শতাংশ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। চা চারা ও শেডট্রির মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাগানের জন্য নিয়মতান্ত্রিক বৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।

চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিস বলছে, মার্চের ১৫ তারিখের মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে চট্টগ্রামে। এর ফলেও বৃষ্টির পানি চা বাগানের উপকার দিবে।


এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!