গুরু মহিউদ্দিনের মৃত্যুদিনে চট্টগ্রাম যুবলীগের ঘরের বিরোধ মিটলো

২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় বসেছিল বৈঠক, আজ আবার

অবশেষে মিটলো চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ঘরের বিরোধ। গত কয়েক মাস ধরে পৃথক সভা সমাবেশ করে আসা নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের এবার একসাথে এক মঞ্চে দেখা গেল শনিবার (২ জানুয়ারি)। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশকে কেন্দ্র করেই অবসান হল নগর যুবলীগ নেতাদের দ্বন্দ্বের।

শনিবার (২ জানুয়ারি) নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে সংগঠন পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে গত কয়েক মাস ধরেই জোট বেধে আলাদাভাবে সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহবুবুল হক সুমন। এই সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বড় ধরনের অঘটন ঘটা নিয়ে বরাবরই চিন্তিত ছিল রাজনৈতিক সচেতনমহল।

গুরু মহিউদ্দিনের মৃত্যুদিনে চট্টগ্রাম যুবলীগের ঘরের বিরোধ মিটলো 1

জানা গেছে, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপেই নগর যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলে আসা এই বিরোধের অবসান হয়। বিরোধ মেটাতে গত ২৪ ডিসেম্বর নগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও ৪ যুগ্ম আহ্বায়ককে ঢাকায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দুই পক্ষের কথা শুনে দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি করার জন্য নগর যুবলীগ নেতাদের নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেখান থেকেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভার কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাকে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মময় রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন। অন্যদিকে নিখিলের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই ছিল যুবলীগের রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের ওপর জোর দিয়ে। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকতে নগর যুবলীগ নেতাকর্মীদের আহ্বান করেন।

চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের কলহের দিকে ইঙ্গিত করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘চট্টগ্রামে যুবলীগের আহবায়ক কেন যুগ্ম আহবায়কের কথা ভেবে ভেবে রাতের ঘুম হারাম করবেন? যুগ্ম আহবায়করা কেন আহবায়কের কথা ভেবে রাতের ঘুম হারাম করবেন? কেন আপনারা যুবলীগের বিপরীত আদর্শের কথা ভেবে রাত পার করেন না?’

তবে কি এখন থেকে নিয়মিতভাবে ফের একসাথে এক ব্যানারে দেখা যাবে নগর যুবলীগের শীর্ষ এই ৫ নেতাকে— এমন প্রশ্নের জবাবে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি এখানে কোনো স্বার্থের বিরোধ নেই। আমাদের কিছু বিষয়ে সমস্যা হচ্ছিল। কেন্দ্র সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মত কাজ করছি।’

স্মরণসভার আয়োজন সম্পর্কে দেলোয়ার হোসেন খোকা বলেন, ‘আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু এককভাবে এই স্মরণসভা ডেকেছিলেন। পরে কেন্দ্র যখন আমাদের নিয়ে একসাথে বসে তখন সেখানেই আমাদের বলা হয় ঐক্যবদ্ধভাবে স্মরণ সভায় যোগ দিতে।’

এদিকে চসিক নির্বাচনের প্রচারণার কৌশল ঠিক করতে রোববারও (৩ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে নগর যুবলীগের এই ৫ নেতার একটি রেস্টুরেন্টে বসার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর যুবলীগের এই নেতা।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহাদত হোসেন লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, দক্ষিণের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, নগর কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম ও মাহাবুবুল হক সুমন।

সাত বছর আগে ২০১৩ সালের ১৩ জুলাই নগর আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আহ্বায়ক এবং দেলোয়ার হোসেন খোকা, দিদারুল আলম, ফরিদ মাহমুদ ও মাহবুবুল হক সুমনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ১০১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় যুবলীগ।

তিন মাসের জন্য গঠিত ওই আহ্বায়ক কমিটি সাত বছর পার করলেও নগর যুবলীগের অন্য কোনো নেতা পাননি পদপদবির পরিচয়। নগর যুবলীগের এই পাঁচ শীর্ষ নেতার বিভক্তির প্রভাব আছে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়েও। গত বছর লালদীঘিতে নগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পণ্ড হয়েছিল রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ বিরোধের মধ্যে গত একমাসেই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের দু দুটি আয়োজন পালিত হয়েছে আলাদা আলাদাভাবে। এর মধ্যে একটি আয়োজন নিয়ে উত্তেজনাও তৈরি হয়েছিল।

গত ১১ নভেম্বর নগরীর চট্টেশ্বরী রোডস্থ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার আয়োজন করেন মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। অন্যদিকে একই দিন বিকেলে একই কমিটির চার যুগ্ম আহ্বায়ক মিলে আলাদা আলোচনা সভার আয়োজন করেন স্টেশন রোডের সৈকত কনভেনশন হলে। এর আগেও চার যুগ্ম আহ্বায়ক মিলে মহিউদ্দিন বাচ্চুকে বাদ দিয়ে ২২ অক্টোবর আয়োজন করেন শেখ রাসেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। বিনা দাওয়াতে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে হট্টগোলের চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এ সময় সভা সংক্ষিপ্ত করে সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করেন ফরিদ মাহমুদরা।

এই ধরনের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের জন্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর একক ক্ষমতা প্রদর্শনের মানসিকতা, সংগঠনের রীতি-নীতি লঙ্ঘন, আধিপত্য বিস্তার, পদ-পদবি ব্যবহার করে কৌশলে ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করছেন বিদ্রোহী ৪ যুগ্ম আহবায়ক। অন্যদিকে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলছেন, কেন কী জন্য এভাবে আলাদা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে সেটাই জানেন না তিনি।

এ বিষয়ে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ সে সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছিলেন, ‘নগর যুবলীগের আহ্বায়ক সাহেব দীর্ঘদিন যুবলীগের ব্যানারে নিজে নিজে কর্মসূচি পালন করেন। আমরা সেখানে দাওয়াত পাইনি। তাই যাইনি। এর আগেও আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মৃত্যুদিবসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি।’

যুগ্ম আহ্বায়কদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছিলেন, ‘দলীয় কর্মসূচির দাওয়াত পেয়েই আমি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। আর আলাদা প্রোগ্রামের বিষয়টি হলো করোনায় আমি নিজ উদ্যোগে ত্রাণ দিয়েছি। দলের নির্দেশনাও ছিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তখন অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। আমার কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি। এটাতে আমি দোষের কিছু দেখি না।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!