‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’—যে পাঁচটি বিষয় আপনাকে জানতেই হবে

প্রত্যেক মানুষের একটি ব্যক্তিক সংবেদনশীলতা থাকে, নিজস্বতা থাকে—তিনি নারী হোন বা পুরুষ। নারীরা ইদানিং টি-শার্টের বুকে লিখেছেন ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই লেখার পক্ষ-বিপক্ষের নানান কথা ভেসে বেড়াচ্ছে। যদিও এদেশে গণপরিবহনসহ পাবলিক প্লেসে নারীর ওপর যৌন হয়রানি ঘটনাও কম নয়। অন্যদিকে শুধু নারী পুরুষের প্রশ্নে নয় মানুষে মানুষে শরীরী দূরত্ব কেমন হওয়া উচিত, আগন্তুকের কাছে আপনি কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন এগুলো আলোচনার অপেক্ষা রাখে। আবার গণপরিবহনসহ অনেক স্থান আছে যেখানে শরীরী দূরত্ব বজায় রাখা বেশ কঠিন।

শুধু শরীরী দূরত্ব কেন, মানসিকভাবেও অনেকেই অপ্রত্যাশিত নৈকট্যমুলক আচরণ পছন্দ নাও করতে পারেন। এটা নির্ভর করছে অপরজনের স্বীকৃতি আর অস্বীকৃতির ওপর। মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ও সম্পর্কে সম্মানজনক দূরত্ব কেমন হওয়া উচিত সে বিষয়ে আপত্তিকর প্রশ্ন উঠছে।

আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বুঝতে পারবেন ঘনিষ্ট বন্ধু, পরিবার বা আত্মীয় ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে আপনি ততটা ঘনিষ্ট হতে ইচ্ছুক হবেন না। এর অর্থ দাঁড়ায় নিরাপদ জোন ছাড়া মানুষ অন্য ক্ষেত্রে একটি সম্মানজনক দূরত্ব পছন্দ করে।

অপরিচিত কারো সাথে বারবার চোখাচোখি হওয়ার মতো বিষয়টাও নিশ্চই মানুষ উপভোগ করে না বরং এটা খুব ছমছমে অনুভূতি ও বিরক্তির উদ্রেক করে।

ব্যক্তিগত দূরত্ব সম্পর্কে গবেষণায় মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসটি দীর্ঘ। গবেষণায় একটি বিষয় প্রতিষ্ঠিত যে শারীরিক নৈকট্যের সীমানা রয়েছে। অন্যদের সামনে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য নিরাপদ ও সম্মানজনক দূরত্ব সবারই কাম্য। কিন্তু এমন কিছু সময় ও অবস্থা থাকে যেখানে মানুষের সামনে কোন বিকল্প থাকে না। যেমন আপনি বাসে আছেন বা কোন ভিড়ে আছেন; সেখানে দূরত্ব হতে পারে কয়েক ইঞ্চির।
এই ঘনিষ্ঠতাকে এড়াতে আপনি এমন কিছু করতে পারেন যা একটি অদৃশ্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সবচেয়ে সহজ উপায়টি হল চোখের যোগাযোগ এড়ানো।

ব্যক্তিগত দূরত্বের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ২০১৭ সালে নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা করে। এতে লোরা লুইসসহ একদল গবেষণাকর্মী কাজ করেন। এ গবেষণায় একটি এয়ারলাইন সংস্থা সহায়তা দিয়েছিল।

এয়ারলাইন কোম্পানিগুলো একটি নির্দিষ্ট ফ্লাইটে আসনগুলোকে খুব কাছাকাছি স্থাপন করেছিলো। এটি এড়ানোর কোন সুযোগ যাত্রীদের ছিল না এবং নির্দিষ্ট সময়ের আগে এর থেকে বেরোনোরও কোন সুযোগ ছিল না। গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ যাত্রীর কাছেই এটি ছিল খুব বিরক্তিকর। দূরত্ব প্রত্যাশীদের মানসিকতাকে বিশ্লেষণ করে লুইসের গবেষণাদল এখানে দশটি কারণ খুঁজে পেলেন। সেগুলো হলো লিঙ্গ পার্থক্য ও লৈঙ্গিক ভূমিকা, সংস্কৃতি, বয়স, ব্যক্তিগত পছন্দ, আন্তব্যক্তিক সম্পর্ক (অনুভূতি ও সামাজিক অবস্থা), অবস্থানের ঘনত্ব, ব্যক্তিত্ব দ্বন্দ্ব (অন্তর্মুখী বা বিচ্ছিন্ন)।

বিমানের গবেষণায় লুইস ব্যাখ্যা করলেন নৈকট্য অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে স্বায়ত্তশাসন, নিয়ন্ত্রণ এবং গোপনীয়তার উদ্বেগ থেকে। এটিকে বলা যায় আরামদায়ক মানসিক অনুভূতি। ব্যক্তিক নিজস্বতার জন্য প্রত্যেকে একটি নিজস্ব সীমা বা স্থান চান।

আরামদায়ক মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পূর্বাভাসের কারণগুলো পরীক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ গবেষকরা ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী ১৯৯জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষ মিলিয়ে একটি আন্তর্জাতিক নমুনা জরিপ করেছেন। ওই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত দূরত্ব পছন্দ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীই সেখানে বলেন, তারা অপরিচিত কারো কাছ থেকে তাদের পছন্দসই দূরত্ব এবং এমনকি বন্ধু থেকে তাদের পছন্দসই দূরত্ব উপস্থাপন করতে চান।

লুইসের গবেষণায় খুব নেতিবাচক ফলাফল এসেছিল। দেখা গেছে, কেউ কেউ অন্যের গায়ের গন্ধ থেকে বিরক্ত হয়েছিলেন। কেউবা আবার অপরজনকে বিরক্ত করেছিলেন। এমনকি কেউ কেউ তীব্র মেজাজও দেখিয়েছিলেন।

এ গবেষণায় গবেষকদল দেখালেন, ব্যক্তিক সীমানা একটি অদৃশ্য দেয়াল যা প্রত্যেকটি মানুষ কামনা করে শারীরিক ও মানসিকভাবে। লুইসের গবেষকদল ও ব্রিটিশ গবেষকরা একত্রে ব্যক্তিগত দূরত্ব রক্ষার পাঁচটি উপায় বাতলে দিয়েছেন-

আপনার বন্ধুদের প্রতি সদয় হোন-

অপরিচিতদের চেয়ে আপনিই ভাল জানেন যে, বন্ধু হিসেবে আপনারই সুযোগ বেশি তার ব্যক্তিগত স্থানে আক্রমণ করতে! তবে আপনি এটি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

নিজেকে দেখুন-

নিজের আচরণের ওপর লক্ষ্য রাখুন। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সীমাবদ্ধ হোন বিশেষত ঘনিষ্ট স্থানে।

মুখোমুখি হবেন না-

আপনি জানেন চোখচোখি ও মুখোমুখি হওয়া যোগাযোগের একটি মাধ্যম। তবে এটিই একমাত্র উপায় নয়। যদি আপনি বোঝেন এর বিকল্প নেই, তবেই মুখোমুখি হবেন অন্যথা নয়।

স্নিফ বাট ডোন্ট স্নুপ

– অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নিজেকে মেলে ধরবেন না। খুব তীব্র সুগন্ধি ব্যবহার, জনবহুল স্থানে খুব জোরে কথা বলা এবং অপরিচিতদের অতিরিক্ত ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার অর্থই হলো অন্যের সংবেদনশীল অংশে অনুপ্রবেশ। এ নিয়ে সচেতন থাকুন।

শরীরী ভাষা পড়তে শিখুন-

নিজের অনুভূতিগুলোকে সজাগ করুন। অন্যের না বলা কথা বুঝতে শিখুন। অন্য ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণ করলে আপনি তার অনুভূতিটা পড়তে পারবেন। অন্তত আপনার কাছে তিনি কী আশা করেন না- এটুকু বোঝা মোটেও কঠিন না। নিজের সংবেদনশীলতাকে জাগ্রত করুন।

সাইকোলজি টুডে অবলম্বনে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!