গায়ের জোরে পতেঙ্গা রিংরোডের বেড়িবাঁধ কেটে ‘রাস্তা’ বানাচ্ছে দুই কোম্পানি

অভিযোগের তীর স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স ও আরএস সোয়েটারের দিকে

চার বছর ধরে চলছে তো চলছেই চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আউটার রিং রোডের নির্মাণ কাজ। সেই কাজ শেষ হচ্ছেই না। এরই মধ্যে রাতের আঁধারে চলছে বেড়িবাঁধ কাটার মহোৎসব। স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও আরএস সোয়েটার লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও কয়েকজন প্রভাবশালী বেড়িবাঁধ কাটছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আউটার রিংরোডের প্রতি ১০০ মিটার পর পর রাস্তা তৈরি করে বানানো হচ্ছে নিচ থেকে বেড়িবাঁধ সংযুক্ত রাস্তা। কেউ কেউ বেড়িবাঁধ কেটে করছে ফুলের বাগান। আবার ‘ওয়েটিং জোন’ বানানোর অজুহাত দিয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের মূল সড়কের বেড়িবাঁধ।

এদিকে নির্বিচারে বেড়িবাঁধ কাটার কারণে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই আউটার রিং রোডটি ভারি বৃষ্টিপাতে ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

গায়ের জোরে পতেঙ্গা রিংরোডের বেড়িবাঁধ কেটে ‘রাস্তা’ বানাচ্ছে দুই কোম্পানি 1

জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার অর্থয়ানে ২০০৫ সাল থেকে পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ কাম আউটার রিংরোড নির্মাণে জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করা হয়। ২০০৭ সালে যাচাই শেষে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে জাইকা। ২০১৩ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের প্রায় ৬ মাস পর শুরু হয় নির্মাণকাজ। ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সাগরপাড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আউটার রিংরোড প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

গায়ের জোরে পতেঙ্গা রিংরোডের বেড়িবাঁধ কেটে ‘রাস্তা’ বানাচ্ছে দুই কোম্পানি 2

সরেজমিন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি ঘুরে দেখা গেছে, সৈকত এলাকায় ৪০০ মিটারের মধ্যে বেড়িবাঁধ কেটে রাস্তা বানিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে সাইনবোর্ডবিহীন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাতারাতি কেটে ফেলেছে মূল রিংরোডের অংশও। ওপর থেকে নামিয়ে তারা বানিয়েছে সংযুক্ত রাস্তা।

সৈকত থেকে সামনে আরও এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চরপাড়া সংলগ্ন বেড়িবাঁধের মাঝামাঝির অংশ কেটে ‘ওয়েটিং জোন’ বানানোর পাঁয়তারাও করছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এছাড়া বন্দর থানার ধুমপাড়া সংলগ্ন রিংরোড কেটে একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিং করার কথা রয়েছে। এভাবে প্রায় ১৫ স্থানে রাস্তা কাটার দৃশ্য দেখা গেছে।

জানা গেছে, স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড, আরএস সোয়েটার লিমিটেডসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি এক শ্রেণীর দালালকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে স্কেভেটর দিয়ে কেটে এসব রাস্তা বানাচ্ছে।

গায়ের জোরে পতেঙ্গা রিংরোডের বেড়িবাঁধ কেটে ‘রাস্তা’ বানাচ্ছে দুই কোম্পানি 3

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, হাজার কোটি টাকার ব্যয় করে সরকার বানাচ্ছে রিংরোড। এখনও প্রকল্পের কাজই শেষ হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেরাই লাভবান হতে কেটে ফেলছে রিংরোড ও বেড়িবাঁধ। দ্রুত বেঁড়িবাধ কাটা বন্ধের পদক্ষেপ না নিলে সামনের বৃষ্টি মৌসুমে বেড়িবাঁধ ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারস লিমিটেড ও আরএস সোয়েটার লিমিটেডের উর্ধতন কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ওই দুই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত দুজন ব্যক্তি জানান, মালিকপক্ষ কাউকে যোগাযোগের ঠিকানা বা মোবাইল নম্বর দিতে নিষেধ করেছে। তবে ওই ব্যক্তিদের দাবি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই এ বেড়িবাঁধ কাটা হয়।

এদিকে এমন দাবি উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘আউটার রিং রোড থেকে নিচের দিকে রাস্তা তৈরি করতে কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!