গার্মেন্টস পণ্য খালাসে কাস্টমসের কাছে বিজিএমইএর ১০ দাবি

আমদানিকৃত পোশাক শিল্প পণ্যের চালান কাস্টমস থেকে দ্রুত খালাস চান বাংলাদেশ পোশাক শিল্প প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বন্দর কাস্টমস এবং বিজিএমইএ পরস্পর সম্পূরক হিসেবে কাজ করতে চায়। তৈরি পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাসে বিদ্যমান জটিলতা নিরসনকল্পে উভয় প্রতিষ্ঠান তাদের মতামত ব্যক্ত করেছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) বিকেলে কাস্টম হাউসের সম্মেলন কক্ষে বিজিএমইএ মনোনীত টেকনিক্যাল কমিটি ও কাস্টম হাউস কমিশনারের মধ্যে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় এ মতামত প্রকাশ করা হয়।

বিজিএমইএর পক্ষে তৈরি পোশাক শিল্পের পণ্য চালান খালাসের ক্ষেত্রে কাস্টমস কমিশনারের কাছে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উপস্থাপন করা হয়।

এ সময় কাস্টমস এআইআর কর্তৃক পণ্য চালান আটক ও এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, কাপড়ের রাসায়নিক পরীক্ষণ বন্ধ করা, ফেব্রিক্সের কাটিং তদারকির সিদ্ধান্ত প্রদানের পরিবর্তে ফেব্রিক্সের নমুনা বন্ড কমিশনারেটে প্রেরণ, পণ্য খালাসে এপ্রাইজমেন্ট প্রদান বন্ধ করা, জেটির পণ্য পরীক্ষণে জটিলতা পরিহার, পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত কাপড় ছাড়করণের জটিলতা নিরসন, কম্পোজিট প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত কেমিক্যালের চালান খালাসে জটিলতা পরিহারসহ এআইআর কর্তৃক বিআইএন/এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হলে সর্বোচ্চ কতদিনের মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাস দেওয়া হবে সে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করায় গুরুত্বারোপ করেন বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ।

এতে সভাপতিত্ব করেন কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম। তিনি বলেন, জাতীয় রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি পোশাক শিল্প আমদানিকৃত পণ্য চালান খালাসে যথাযথ দলিলাদি উপস্থাপনসহ প্রযোজ্য এইচএস কোড উল্লেখের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বন্ডের মাধ্যমে শুল্ক মুক্তভাবে আমদানিকৃত কাপড়ের অপব্যবহার রোধকল্পে বিজিএমইএর সহযোগিতা কামনা করেন। এইচএস কোড সংক্রান্ত জটিলতায় বিজিএমইএর সুপারিশসহ অঙ্গীকারনামা প্রদান সাপেক্ষে পণ্য চালান খালাস, পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত কাপড় ছাড়করণে খালাসকালে পরীক্ষণ ও এআইআর কর্তৃক আটককৃত চালান ৩ দিনের মধ্যে ছাড়করণসহ পোশাক শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুততার সাথে সম্পাদনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

সভায় বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে পণ্যের দরপতন, বিদেশি ক্রেতার পরিদর্শন সংস্কার কর্মসূচি প্রতিপালন, সর্বশেষ শ্রমিকদের মজুরি ৫১% বৃদ্ধিসহ নানাবিধ অবকাঠামোগত সমস্যায় ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০% ।’
তিনি আরো বলেন, ‘এমনিতেই লিডটাইম বা উৎপাদন সময়ের জন্য আমরা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে আছি এ কারণেই নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে রপ্তানিতে ব্যর্থ হয়ে স্টকলটসহ অর্ডার বাতিল হয়ে রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ক্রমেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প সক্ষমতা হারাচ্ছে উল্লেখ করে আবদুস সালাম বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৪০% রপ্তানিকারক উৎপাদন ব্যয়ের নিচে রপ্তানি আদেশ নিচ্ছে; প্রায় ৮৭% বিদেশি ক্রেতা পণ্য মূল্য বাড়ায়নি। উৎপাদন ব্যয়ের কমে প্রায় ৫০% কারখানা পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে বিগত অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমান অর্থ-বছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.৬৭%। ’

তিনি বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামকে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সহজীকরণের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য চালান দ্রত খালাসের অনুমোদন প্রদান করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার জন্য তিনি বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এ.এম. চৌধুরী সেলিম, পরিচালক এ.এম. মাহবুব চৌধুরী, অঞ্জন শেখর দাশ, খন্দকার বেলায়েত হোসেন, প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, কাস্টম হাউসের পক্ষে অতিরিক্ত কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন, যুগ্ম কমিশনার সাধন কুমার কুন্ডু প্রমুখ।

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!