গরিব ঠকিয়ে করোনার সময়েও ‘বড় লোক’ সাড়ে ৩ হাজার মানুষ

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। আর ২০২০ সালের জুন মাসে এসে দেশে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৩৭ জনে। করোনার দুর্যোগে পড়ে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেলেও ঠিক এই সময়েই ‘বড়লোক’রা আরও ধনী হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু করোনা মহামারির মাত্র তিন মাসেই ৩ হাজার ৪১২ জন মানুষ নতুন করে কোটিপতি হয়েছেন। বেসরকারি ব্র্যাকের জরিপে দেখা গেছে, মহামারির ঠিক এই সময়টাতে দেশে করোনার হানায় আয় কমে গেছে ৮০ ভাগ পরিবারে। অনেকে হয়েছে প্রায় নিঃস্ব।

তবে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকে ব্যাংকে আমানত রাখা কোটিপতির সংখ্যা খানিকটা কমে যায়। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ করোনাভাইরাস দেশে আঘাত হানার পর থেকে গত জুন পর্যন্ত সময়ে হঠাৎ বেড়ে গেছে কোটিপতির সংখ্যা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত ১১ বছর ধরেই দেশে কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে। এ সময়ে ৬৪ হাজার ৫৪৫ জন মানুষ কোটিপতির তালিকায় নতুন করে নাম তুলেছেন। ২০০৯ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। মাত্র ১১ বছর পর এই সংখ্যা এখন ৮৬ হাজার ৩৭ জন। এর মধ্যে গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৫ হাজার ৬৪১ জন।

ওই প্রতিবেদনে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের জুন মাস শেষে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা এক হাজার ২৬৯ জন। ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৪১৮ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২২৪ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৩৮৩ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৬০৫ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৯৯২ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৪৩০ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত আছে ৩ হাজার ৩০৫ জনের। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা ৯ হাজার ৫২৯ জন। এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা আমানত রেখেছেন ৬৭ হাজার ৮৮২ জন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব মতে, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭ জনে। ১৯৮০ সালে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৮ জন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে কোটিপতি ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।

অন্যদিকে ২০০৯ সালের জুন শেষে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। মাত্র ১০ বছর পর ২০১৯ সালের জুন শেষে কোটিপতির সংখ্যা পৌঁছে যায় ৮০ হাজার ৩৯৬ জনে। চলতি বছর ২০২০ সালের মার্চ শেষে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন। মাত্র তিন মাস পর চলতি বছরের জুন শেষে কোটিপতির সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮৬ হাজার ৩৭ জনে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!