গরমে রোগী বেড়েছে চমেকে

চিৎকার চেঁচামেচি গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আহাজারি করছে শত শত রোগী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার মেডিসিন ইউনিট ৩ এর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেতরে-বাইরে ভরপুর রোগী।বৃষ্টির পর হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়ায় অত্যাধিক হারে রোগী বেড়েছে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রোগীদের জন্য ৬৬টি সিট বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৭। যা সিটের তুলনায় প্রায় ৪ গুণের কাছাকাছি। ওয়ার্ডের ভেতরে, বাহিরে ও বারান্দায় তিল ধারণের স্থান নেই। ওয়ার্ডের চতুর্দিকে রোগী ও স্বজনদের।

ওয়ার্ডের ভেতরে রোগীদের জন্য বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা থাকলেও বারান্দায় ও বাইরে রোগীদের জন্য সে ব্যবস্থা না থাকায় গরমে অসহ্য হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন রোগীরা। কেউ কেউ আবার নিজেরা হাত পাখা কিনে এনে গরম সামাল দিচ্ছেন। চারপাশে বেহাল দশা।

ফতেয়াবাদ থেকে আসা সুজুরিতা দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার স্বামী সম্বু দাশকে সাপে কামড় দিলে ৫দিন আগে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু জায়গা হলো হাসপাতালের বারান্দায়। এখানে কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। ৫দিন ধরে গরমে রোগীতো কষ্ট পাচ্ছেই তার সাথে সাথে আমি আর আমার বাচ্চাও গরমে অতিষ্ঠ।’

তিনি আরো বলেন, শুধু গরম নয়, বাথরুমের গন্ধের জন্য থাকা যায় না, বমি আসে। তার উপর আবার পানির সমস্যা। খাওয়ার পানিতো কিনে এনেই খেতে হয় অনেক সময় আবার বাথরুমেও পানি থাকেনা। বাইরে থেকে পানি এনে বাথরুমে যেতে হয়। এতো কষ্ট তবু চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।

ওয়ার্ডের বাইরে ফ্লোরে থাকা সীতাকুণ্ডের আকলিমা বেগম বলেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, আমার স্বামী আাখেরুজ্জমান প্রায় ৪ মাস ধরে জ্বরে ভুগছে। হঠাৎ জ্বর বেড়ে যাওয়ায় ৭দিন আগে হাসপাতালে এসে ভর্তি করায়। কিন্তু হাসপাতালে এমন পরিবেশে তিনি আরও দূর্বল হয়ে পড়েছেন। একদিকে স্বামীকে নিয়ে বাইরে পড়ে আছি তার উপর ফ্যানের ব্যবস্থাও নেই। এই গরমে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। স্বামী রাতদিন শুধু কষ্টে কাৎরাচ্ছে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করছে না, ঘুমাতেও পারছেনা।’

বেশিরভাগ রোগীর স্বজনরা জানান, হাসপাতালের এই পরিবেশে রোগীতো কষ্ট পাচ্ছেই তার সাথে আমরা যারা রোগীর স্বজনরা আছি তারাও রোগী হয়ে যাচ্ছি। রোগীর সেবা করতেই আমাদের থাকা, সেখানে যদি আমরাই রোগী হয়ে যাই রোগীকে কীভাবে দেখবো?

হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, নানারকমের রোগী এসে ভর্তি হয়েছেন। গরমের কারণে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী এসেছে হাসপাতালে। সাপের কামড়ে কেউ এসেছে, কারোর পেট ব্যাথা, জ্বর, মাথা ব্যাথার রোগী। অনেকেই খুবই সিরিয়াস কন্ডিশনে আছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে আমদের চিকিৎসকদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আখতারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মেডিসিন বিভাগের একটি ইউনিটে শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের সাথে তো আর অন্য রোগীদের রাখা যাবে না যে কারণে বাকি মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। আর বৃষ্টির পর হঠাৎ করে তাপমাত্রা বাড়ায় রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এতে সিটের তুলনায় রোগী বেশি হওয়াতে রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।

এসএএস/এনজে/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!